রবীন্দ্র চিন্তায় প্রভাব ফেলেছেন যে মহিলারা
আমরা সকলেই কমবেশী জানি অনেক মহিলাই নিজেদের শিল্পসত্ত্বা বা চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রভাবিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। বিভিন্ন লেখায় সেটি বারংবার ফুটে ওঠে। মেজ বৌঠানই হোন বা নতুন বৌঠান, নিজের স্ত্রী বা কিশোরী রাণু – রবিজীবনে এই মহিলাদের অবদান অনস্বীকার্য।
জ্ঞানদানন্দিনী (১৮৫২-১৯৪১)
রবীন্দ্রনাথের দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় আইসিএস অফিসার এবং বাংলার স্ত্রী-স্বাধীনতার পথিকৃৎ। সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে জ্ঞানদানন্দিনীর ৭ বছর বয়সে বিয়ে হয়।
ছোট দেবর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তার স্নেহের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ।পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে তিনি নিয়মিতভাবেই তার বাড়িতে আসতেন। এছাড়া, রবি ইংল্যান্ডে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথের সাথে তার এবং তার সন্তানদের সখ্য গড়ে ওঠে। তার কন্যা ইন্দিরা পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘদিনের অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে ওঠেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়েতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। রবীন্দ্রনাথের নাটকের পারফর্মেন্সেও সহযোগিতা করেন তিনি।
কাদম্বরী দেবী (১৮৫৯-‘৮৪)
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী, রবীন্দ্রনাথের ‘নতুন বৌঠান’। রবীন্দ্র-মানস গঠনে এই অসামান্য নারীর অবদান স্মরণীয়। অনেকে মনে করেন, রবীন্দ্রনাথের কবি হয়ে ওঠার আন্তরিক চেষ্টার মূলে ছিলেন কাদম্বরী।
রবীন্দ্রনাথের বিয়ের কয়েকমাস পরেই কদম্বরী আত্মহত্যা করেন। আগেও তিনি একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর আত্মহত্যার কারণ সঠিকভাবে জানা যায়নি। ধারণা করা হয়, নিঃসন্তান স্ত্রীর সঙ্গহীন শূন্যতা ভরিয়ে তোলার জন্যে স্বামীর যতটা মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন ছিল জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তা ছিলেন না।
রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর নতুন বৌঠান কাদম্বরী সম্পর্কে এক অনুচিত সন্দেহের কাঁটা ঠাকুরপরিবারে বিঁধেছিল।
মৃণালিনী দেবী (১৮৭৪-১৯০২)
রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী। প্রকৃত নাম ভবতারিণী। বর্তমান খুলনা জেলার ফুলতলা গ্রামের বেণীমাধব রায় চৌধুরীর একমাত্র কন্যা। বিয়ের সময় ৯ ডিসেম্বর ১৮৮৩। বিয়ের পর রবীন্দ্রনাথ ভবতারিণীর নাম পাল্টে রাখেন, মৃণালিনী।
শান্তিনিকেতনের আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় তিনি শুধু গায়ের গয়না রবীন্ত্রনাথকে খুলে দিয়ে সহায়তা করেননি, সু-গৃহিনী হয়ে স্বামীর মহৎ আদর্শকে কাজে পরিণত করার জন্য সবসময় তিনি কবির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। শান্তিনিকেতনের ব্রাহ্মচর্য আশ্রমের ছাত্রদের জন্যে তিনি নিজের হাতে রান্না করতেন।
লেডি রাণু মুখার্জি
এই কিশোরীর প্রেমে পড়াটা রবীন্দ্রনাথের জ়ীবনে একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। অসমবয়সী রাণু ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে এক আশ্চর্য অন্তরঙ্গ নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ১৯১৭ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত। শিল্পপতির পুত্র বীরেন্দ্রের সঙ্গে বিবাহ স্থির হয়ে গেলে রাণু-রবীন্দ্রের দীর্ঘ আট বছরের প্রীতি- ভালবাসার মধুর পরিণত সম্পর্কটি ছিন্ন হয়ে যায়।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো
একজন আর্জেন্টাইন নারীবাদী লেখিকা, একজন পুরোদস্তুর সাহিত্যিক। ‘সুর’ নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের সাথে তার পরিচয় হয় সাহিত্যের হাত ধরেই।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সাথে রবীন্দ্রনাথের দেখা হয় মাত্র দু’বার। ১৯২৪ সালে আর্জেন্টিনায় আর প্যারিসে, ১৯৩০ সালে। রবীন্দ্রনাথ ভিক্টোরিয়াকে বারবার শান্তিনিকেতনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দেখা না হলেও যোগাযোগ কিন্তু বন্ধ ছিল না। প্রায় নিয়মিতই একজন আরেকজনকে চিঠি লিখতেন, টেলিগ্রামে বার্তা আদান-প্রদান হত।