সমকামী যুগলরাও খুলতে পারবে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট, ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এই ব্যাঙ্কের
এবার থেকে ব্যাঙ্কে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে সমকামী যুগল। এমনই ঘোষণা করেছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক। দেশে এমন পদক্ষেপ এই প্রথম। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে যেমন উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে, তেমনই ভবিষ্যতে আরও বদলের আশাও প্রকাশ করেছেন সমকামীরা।
তিন বছর হল অপরাধের তকমামুক্ত হয়েছে ৩৭৭ ধারা। এ দেশে সমকামী সম্পর্ক আর আইনত অপরাধ নয়। বিয়ের স্বাধীনতা এখনও না পেলেও সমকামী যুগল একসঙ্গে বসবাস করলে তা আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য আর নয়। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সে রায়ের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষেই এল বেসরকারি ব্যাঙ্কের নতুন সিদ্ধান্ত। একসঙ্গে অ্যাকাউন্ট খোলার পাশাপাশি, ফিক্সড ডিপোজিট রাখারও সুযোগ পাবে সমকামী যুগল। নিজের অ্যাকাউন্টে নমিনি হিসাবেও রাখা যাবে সমকামী সঙ্গীকে। ওই ব্যাঙ্ক থেকে করা স্বাস্থ্য বিমাতেও যুক্ত করা যাবে সঙ্গীর নাম।
সমবেশ চেম্বার অফ কমার্স ফেসবুক পোষ্টে এক্সিস ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
সমকামী বিয়ের আইনি অনুমোদনের দাবি নিয়ে আন্দোলন আরও জোরদার হয়েছে ২০১৮ সালের পর থেকে। তবে সে বিষয়ে এখনও তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে একটি ব্যাঙ্কের এমন উদ্যোগ গোটা দেশেই রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের মানুষকে সমান সম্মান দিতেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
বেসরকারি ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্ত বেশ খানিকটা এগিয়ে দিল তাঁদের লড়াই, বলছেন এ শহরের বহু সমকামী নাগরিক। একসঙ্গে অ্যাকাউন্ট খোলা গেলে কিছুটা হলেও সামাজিক স্বীকৃতি পাবে সম্পর্ক, মনে করছেন তাঁদের একাংশ। তবে এখনও অনেক বদল আনতে হবে, মনে করাচ্ছেন সমকামীরা। সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত। তাঁর বক্তব্য, একটি ব্যাঙ্কের এমন পদক্ষেপ অন্যান্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেও দিশা দেখাতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি ব্যাঙ্কের কোনও নথি সর্বত্র গ্রহণ না করা হলেও, বেশ কিছু জায়গায় তা কাজেও লাগবে। এর পর ধীরে ধীরে অন্যান্য বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও এই নিয়ম চালু করলে সেই নথি নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবে সমকামী যুগলেরা।’’ এত দিন কোনও ধরনের সামাজিক স্বীকৃতিই পেত না সমকামী সম্পর্ক। ফলে একসঙ্গে বাড়ি ভাড়া নেওয়া, কেনা থেকে শুরু করে হাসপাতালে একে অপরের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রেও দেখা দেয় সমস্যা। শুধু পরিবারকেই এ ধরনের অধিকার দেওয়া হয়। ব্যাঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথিতে একে অপরের নাম যুক্ত করা গেলে আগামীতে সে সব সুবিধাও পাওয়ার পথ খুলতে পারে বলে আশা সমকামীদের একাংশের।
এ শহরেই সংসার পেতেছেন সমকামী যুগল সুচন্দ্রা দাস ও শ্রী মুখোপাধ্যায়। এক ছাদের তলায় থাকতে গেলে একসঙ্গে একটি অ্যাকাউন্ট থাকা কখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। তবে সুচন্দ্রা বলেন, ‘‘একসঙ্গে একটি অ্যাকাউন্ট খুললেই যে সব সমস্যার সমাধান হবে, এমনও নয়। এখনও আমরা একে-অপরের পরিবার হিসাবে সামাজিক ভাবে পরিচয় দিতে পারি না। ফলে বহু জায়গায় সঙ্কট তৈরি হয়।’’ তেমনই একটি অসুবিধার কথা উল্লেখ করলেন কৌশিক। শুধু স্বাস্থ্য বিমা নয়, সব ধরনের বিমায় একে অপরের নাম যুক্ত করতে পারা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সে প্রতিশ্রুতি বহু ক্ষেত্রে দেওয়া হলেও বাস্তবে তেমনটা হয় না। এ অভিজ্ঞতা শ্রী এবং সুচন্দ্রারও রয়েছে।
একে উপরের সম্পত্তিতে প্রধানত সঙ্গীর আইনি অধিকার কী ভাবে দেখানো যাবে, সে ভাবনা শুরু হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কৌশিক। একসঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারার সূত্রে সে সব প্রয়োজনের কথাও এ বার ধীরে ধীরে সকলে সামনে আসবে বলে আশা করছেন সমকামীদের অধিকার নিয়ে লড়াইয়ে যুক্ত অনেকেই।