উত্তাল সমুদ্র, দীঘার জলোচ্ছাস দেখতে ভিড় পর্যটকদের
নিম্নচাপের প্রভাবে সোমবার দিনভর বৃষ্টিস্নাত দীঘায় প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আকর্ষণে ভিড় জমালেন পর্যটকরা। সকাল থেকে সি-বিচে পর্যটক সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। সৈকত শহরে পর্যটকদের ভিড় বাড়তেই রংবেরঙের খেলনার পসরা থেকে ঘোড়া, ঝালমুড়ি, তেলেভাজার দোকানের ভিড়ে আগের চেহারায় ফেরে দীঘা। সাধারণত, সোমবার ভিড় তুলনামূলক কম থাকে। কিন্তু, নিম্নচাপের জেরেই রবিবারের মতো সোমবারও দীঘায় ছিল পর্যটকদের ভিড়।
নিম্নচাপের জেরে গোটা দীঘা উপকূলে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া। উপকূল বরাবর দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিস এবং সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে দিনভর সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে। দুপুরে জোয়ারের সময় প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্রের জল মেরিন ড্রাইভ ভাসিয়ে দেয়। গার্ডওয়াল টপকে সমুদ্রের ঢেউ মেরিন ড্রাইভে উপচে পড়তেই পর্যটকরা আনন্দে ফেটে পড়েন। তাজপুর ও মন্দারমণিতেও পর্যটক সংখ্যা ভালো ছিল। নিউ দীঘার তুলনায় ওল্ড দীঘার ঘাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেই জন্য নিম্নচাপ ঘনীভূত হলে ওল্ড দীঘার ১ ও ২ নম্বর ঘাট এবং সি-হক ঘোলা ঘাটে বেশি নজরদারি চলে। এদিন ওই তিনটি ঘাটে পর্যটকদের সমুদ্রস্নান করতে দেওয়া হয়নি। তবে নিউ দীঘার মেরিনা ঘাট, ক্ষণিকা ঘাট, হলিডে হোম ঘাট, যাত্রানালা এবং ঢেউসাগর ঘাটে প্রচুর পর্যটক ছিলেন। ভাটার সময় ঘণ্টা খানেক পর্যটকরা সমুদ্রস্নান করেন। দুপুরে জোয়ার শুরু হতেই প্রবল জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়। নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ায় দীঘা উপকূলে ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। এদিন সন্ধ্যার পর দীঘা উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় বয়। তাতে কিছুক্ষণ উপকূল এলাকা শুনশান হয়ে যায়। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন অফিসার মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের চেহারায় ওড়িশা উপকূলের দিকে চলে গিয়েছে। তার প্রভাবে দীঘায় ঝড় হবে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে সতর্ক করা ছিল। সেইমতো উপকূল এলাকায় সতর্কতা জারি হয়। এদিকে দীঘায় পর্যটকদের ভিড় বাড়তেই করোনাবিধি উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। অধিকাংশ পর্যটকের মুখ থেকে মাস্ক উধাও। হোটেলে থাকার জন্য ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ কিংবা করোনা পরীক্ষা রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করেছে জেলা প্রশাসন। সেই নিয়মেও ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনের নিয়ম না মানার অভিযোগে রবিবার নিউ দীঘার একটি হোটেলের ম্যানেজার সৌভিক আদক এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট কৌশিক গোস্বামীকে দীঘা থানার পুলিস গ্রেপ্তার করে। সোমবার দু’জনকে কাঁথি এসিজেএম কোর্টে তোলা হলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।
যে সকল পর্যটকের ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ হয়নি, তাঁদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে দীঘায় আসতে হবে। অথবা দীঘায় হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে বিশেষ ক্যাম্পে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। সেই জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিতে হবে। কিছু হোটেল এসব নিয়ম না মেনেই পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় পর্যটক সংখ্যা ভালো রয়েছে দীঘায়। তবে, করোনাবিধিতে কোনওরকম উদাসীনতা নয়।