কেন্দ্রের ওপর ভরসা নেই, ফসলের নিশ্চিত মূল্যের আইন আনতে তাই মমতাকে অনুরোধ কৃষকদের
শাক-সব্জি, ফল সহ উৎপাদিত সমস্ত কৃষিজাত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে নিশ্চিত করতে রাজ্যওয়াড়ি পৃথক আইনের দাবি করল বিভিন্ন কৃষক (Farmers) সংগঠনের যৌথ মঞ্চ সর্বভারতীয় কিষান সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ন’মাস ধরে চলা কৃষক আন্দোলনের অন্যতম সমর্থক তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উপর এব্যাপারে বেশি ভরসা রাখতে চাইছে সারা দেশের সামনে নজির তৈরি করতে। তাই মঞ্চের রাজ্য শাখা প্রস্তাবিত আইনের খসড়া সহ বিস্তারিত চিঠি লিখে তাদের দেশব্যাপী দাবির সূচনা করল মমতাকে দিয়ে। বৃহস্পতিবার মঞ্চের রাজ্য কমিটি সাংবাদিক বৈঠক করে এই তথ্য সামনে আনে। প্রসঙ্গত, জাতীয় স্তরে যে ৫০০টি সংগঠনকে নিয়ে গঠিত সংযুক্ত কিষান মোর্চার ব্যানারে তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে মোদি-বিরোধী লাগাতার ধর্না চলছে তার অন্যতম অংশীদার বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির এই যৌথ মঞ্চ।
কার্তিক পাল, অভীক সাহা, তুষার ঘোষ, প্রদীপ সিং ঠাকুর প্রমুখ মঞ্চের রাজ্য নেতৃবৃন্দ এদিন বলেন, এই রাজ্য মূলত কষিনির্ভর। ৬০ শতাংশের বেশি মানুষের জীবিকা কৃষির উপর নির্ভরশীল। ৬৮ শতাংশ জমি কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। রাজ্যের জিডিপির ২৭ শতাংশ আসে কৃষিক্ষেত্র থেকে। অথচ কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষির খরচ উত্তরোত্তর বেড়ে চলায় তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে জীবিকা নির্বাহের প্রশ্নে। পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ কৃষকরাই রাজ্যের নাগরিকের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। কেন্দ্র ২৩টি খাদ্যশস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করেই তাদের দায় সেরে ফেলে। কিন্তু এর বাইরে যাবতীয় শাক, সব্জি, ফুল, ফল, মাছ ইত্যাদির কৃষিজাত ফসলের ন্যূনতম মূল্য গ্যারান্টিহীন হয়ে থাকায় কৃষকদের নিত্য অভাবী বিক্রির মধ্যে পড়তে হয়। এই অবস্থায় তাদের ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা সমাজের কর্তব্য। আর সেই কাজে রাজ্য সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সমন্বয় কমিটি এই লক্ষ্যেই দাবি করছে, রাজ্য সরকার সব ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য গ্যারান্টি করতে পৃথক আইন প্রণয়ন করুক। সেই আইনের একটি প্রস্তাবিত খসড়াও এজন্য তৈরি করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদি-বিরোধী কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন আগাগোড়া সমর্থন জানানোর কথা বলে এসেছেন। তাই তাঁর সরকারের উপর আস্থা রেখে আমরা চাইছি, তিনি এই ধরনের আইন তৈরি করে সারা দেশের সামনে নজির তৈরি করুন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কেরল, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ সহ ২৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে যৌথ মঞ্চের আঞ্চলিক নেতৃত্ব একই রকম খসড়া আইন পাঠিয়ে এই দাবি রাখবে। তবে রাজ্যে এই আইন না করলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আমাদের এরাজ্যেও একই ধরনের লাগাতার আন্দোলনের পথে নামতে বাধ্য হতে হবে।