স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বিনামূল্যে হল লক্ষ টাকার অস্ত্রোপচার, আপ্লুত জলপাইগুড়ির সব্জি বিক্রেতা
মেরুদণ্ডের রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করেও কিছু হচ্ছিল না। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন সব্জি বিক্রেতা মহম্মদ আলম হক। তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলায়। রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে (Swasthyasathi Card) চিকিৎসা পেয়ে পরিবারের সদস্যরা উচ্ছ্বসিত। তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাঁরা বলেন, প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ টাকার চিকিৎসা খরচ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে মিটিয়েছেন।
জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের বিন্নাগুড়ির বাসিন্দা আলম। তিনি পেশায় সব্জি বিক্রেতা। তাঁর স্ত্রী মুসলেহা বেগম গৃহবধূ। তাঁদের পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক মাস আগে আলম কোমরের যন্ত্রণায় আক্রান্ত হন। তখন তিনি স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধ খান। কয়েকদিন ব্যথা কম থাকলেও ফের যন্ত্রণা শুরু হয়। এভাবে কয়েক মাস কেটে যায়। চারমাস আগে কোমরের যন্ত্রণায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। পরিবারের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের বহু জায়গায় ছোটাছুটি করেও কোনও লাভ হয়নি তাঁর।
আলমের স্ত্রী বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের পরামর্শমতো স্বামীকে মালবাজার হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে এমআরআই করার পর জানা যায়, তাঁর স্পাইনাল কডে ডিসঅর্ডার হয়েছে। অপারেশন না করা হলে তিনি সুস্থ হবেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা মতো শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে স্বামীকে নিয়ে আসি। সেখানে একদিন স্বামীকে ভর্তি রাখা হয়েছিল। কিন্তু, সেখানে অপারেশন হবে না বলে জানানো হয়। এ ধরনের রোগের অপারেশন একমাত্র কলকাতায় হয় বলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানায়। এমন অপারেশনের খরচও নাকি কয়েক লক্ষ টাকা। তা শোনার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কোথাও এত টাকা পাব। কারণ, স্বামীর দিনে ১৫০-২০০ টাকা আয় ছিল। অসুস্থ হওয়ার পর সেই আয় বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাঙ্কে সঞ্চিত কোনও অর্থ নেই। সেই সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের পরামর্শমতো প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আলমের স্ত্রী বলেন, গৌতমবাবুই স্বামীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে দেন। তাঁর সহায়তায় স্বামীকে নিয়ে কলকাতায় যাই। সেখানে তিনি একটি বাড়ি ভাড়া করে দেন। ২৪ আগস্ট ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করাই। ২৫ আগস্ট তাঁর অপারেশন হয়। ২৮ তারিখ রাতে নার্সিংহোম থেকে স্বামীকে ছাড়া হয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে সেখানেই স্বামীর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। এই অপারেশনের বিল হয়েছিল প্রায় ৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। সবটাই ওই কার্ড দিয়ে মেটানো হয়েছে। এখন স্বামী কিছুটা সুস্থ। শীঘ্রই ও স্বাভাবিকভাবে জীবযাপন করতে পারবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ক’দিন আগে বাড়িতে ফিরেছি। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড এবং গৌতমবাবুর সহযোগিতায় এত বড় উপকার মিলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকারের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, কয়েকদিন আগেই ওই সব্জি বিক্রেতা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের বিনিময়ে তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। তাঁকে সহযোগিতা করতে পেরে ভালো লাগছে।