ভারতে থাকতে গেলে হিন্দি বলতে হবে! বাঙালি পরিচালককে ‘ফতোয়া’, তুলকালাম নেটপাড়ায়

পরিচালক সত্রাজিৎ সেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে বলেন, ‘আমার কাছে এদিন দুপুর একটা নাগাদ একটি ফোন আসে।

September 17, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

‘ইয়ে বাংলাদেশ নহি হ্যায়, ইন্ডিয়া হ্যায়’! পশ্চিমবঙ্গে বাংলার বলার জন্য এহেন কটাক্ষ শুনে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন বাঙালি পরিচালক (Film Director) তথা প্রযোজক। ফোনের ওপারে থাকা ডেলিভারি বয়টিকে কী বলবেন প্রথমে ভেবেই উঠতে পারছিলেন না। তবে বয়টির কথার ঝাঁঝ ক্রমশ বাড়ায়, রাগের পারদও চড়ছিল। ফিকশন নয়। ঘটনাটি ঘটেছে বাস্তবেই। টলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক সত্রাজিৎ সেন (Satrajit Sen) একটি নামী চশমার ব্র্যান্ডের অনলাইন অ্যাপ থেকে দুটি চশমা অর্ডার করেছিলেন। তবে পাওয়ার ভুল আসায় সেটি ফেরত পাঠিয়েছিলেন তিনি। আর সেই চশমা ফেরত নিতে আসার ক্ষেত্রেই ঘটল বিপত্তি। সেই চশমার ব্র্যান্ড একটি থার্ড পার্টি সংস্থা ব্যবহার করেই লজিস্টিকের কাজ সারে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। কিন্তু, পরিচালককে ফোন করেই হিন্দিতে কথা বলতে আরম্ভ করেছিলেন সংশ্লিষ্ট ডেলিভারি বয়টি। তিনিও বাংলাতেই শুরুটা করেছিলেন। তবে ওই ব্যক্তিকে পরিচালক জানান, তাঁর কাছ থেকে চশমা রিটার্ন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে তিনি যে এতকিছু হিন্দিতে বুঝিয়ে বলতে পারবেন না, সেটিও জানান। এখানেই ঘটল বিপদ।


পরিচালক সত্রাজিৎ সেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে বলেন, ‘আমার কাছে এদিন দুপুর একটা নাগাদ একটি ফোন আসে। এক ভদ্রলোক আমাকে ফোন করে হিন্দিতে বলেন, আজ চশমা লেনে কে লিয়ে আয়েঙ্গে। আমি তখন তাঁকে বলি যে চশমা তো নিয়ে যাওয়া হয়ে গিয়েছে। আর এত কথা আমি হিন্দিতে বুঝিয়ে বলতে পারব না সেটাও জানাই। আচমকা ওই প্রান্ত থেকে ভেসে আসে, কিউ মেরে হিন্দি বোলনে সে কেয়া ফরক পড়তা হ্যায়, আপ কহা পে রহতে হো? বাংলাদেশ মে? ‘ পরিচালকের সংযোজন, ‘কথাটা শুনেই মাথাটা আস্তে আস্তে গরম হতে শুরু করেছিল। আমি জিজ্ঞাসা করি, ভাই কী বলতে চাইছেন? আপনি কোথায় থাকেন? তিনি জানান, হামারা নাম অঙ্কুর হ্যায়, বাহার সে আয়ে হ্যায় ইয়াহা কাম করনে কে লিয়ে। আপ ইন্ডিয়া মে রহতে হো, হিন্দি আনা চাহিয়ে। এই অডাসিটি দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম।’


এরপরেই পরিচালক সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডকে ট্যাগ করে একটি টুইট করেন। যা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। গর্জে ওঠে নেটপাড়া। এমনকী সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়দের মতো সেলেবরাও প্রতিবাদে শামিল হন। সৃজিত এদিন লেখেন, ‘কাঁচা বাংলায় উত্তর দিয়েছিস তো’?

তাঁর কমেন্টের রেশ ধরেই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘খিস্তিটা বিশুদ্ধ বাংলায় হতে হবে, তবে আনন্দ’! এদিকে আবির সোনার কেল্লার ফেলুদার মতো করে বলে ওঠেন, ‘আপনি হিন্দি চালিয়ে যেতে পারেন, বেশ লাগছে…’। প্রয়োজনে পরিচালকের পাশে আছেন, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা।

সত্রাজিৎ এদিন জানিয়েছেন, টুইট করার পরে মূল ব্র্যান্ড এবং থার্ড পার্টি সংস্থা দুইয়ের তরফ থেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘টুইটারেই ওঁরা রিপ্লাই করেছিলেন। আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম এক্ষেত্রেও বাংলাতেই কথা বলব। এক ভদ্রলোক ফোন করেন। তিনি বাংলাতেই কথা বলেন। আমি তাঁকে সাফ জানাই এই অভিজ্ঞতার পর আর ওই ব্র্যান্ডের সঙ্গে কোনও ধরনের সম্পর্ক রাখতে ইচ্ছুক নই। তাই অফারের প্রলোভন না দিতে। বরং ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এটাই আমার একমাত্র দাবি।’

পরিচালকের সাফ কথা, ‘আমি চাই না কেউ চাকরি হারান। তবে উনি যা বলেছেন তাতে ডেলিভারির কাজ ওঁর জন্য নয়। কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন অনায়াসে। করেছেন, তার জন্য শাস্তি হওয়া দরকার’।

এ প্রসঙ্গে বাংলা পক্ষের কৌশিক মাইতি বলেন, পরিচালক সত্রাজিৎ সেন যে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছেন সেটা বড় ব্যাপার। আজ তাঁর সঙ্গে হয়েছে বলে জানা গেল। এই ধরনের ঘটনা সাধারণ মানুষের সঙ্গে রোজ হচ্ছে। বাংলায় থেকে মানুষ বাংলা বলবে না! হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বন্ধ হোক। বাংলায় থাকতে গেলে, চাকরি করতে হলে বাংলা শিখতে হবে’।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen