ভেলোরে ১ বছরে ৪০ কোটির চিকিৎসা বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায়
বাঙালির অন্যতম পছন্দের চিকিৎসা গন্তব্য তামিলনাড়ুর ভেলোরের ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজ (Christian Medical College)। এবার সেখানেও কামাল করল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi)। এক বছরেরও কম সময়ে সেখানে হইচই ফেলে দিয়েছে দেশের স্বাস্থ্যবিমাক্ষেত্রে সাড়া জাগানো এই রাজ্য সরকারি প্রকল্প। ভেলোরে ইতিমধ্যেই তিনটি স্বাস্থ্যসাথী হেল্প ডেস্ক তৈরি হয়েছে বাংলার রোগীদের জন্য। একটিতে হচ্ছে নাম নথিভুক্তিকরণ, বাকি দু’টি রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী রোগীর কার্ড নথিভুক্ত করে চিকিৎসা শুরু করার জন্য। ভেলোরের বহু ডাক্তার পর্যন্ত বাঙালি রোগীদের দেখলেই বলছেন, আপনার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে কি?
গত অক্টোবরে এখানে স্বাস্থ্যসাথী চালু হয়েছিল। তারপর এক বছরের কম সময়ে এখনও পর্যন্ত ৪০ কোটি টাকার চিকিৎসা নিখরচায় পেয়েছেন রাজ্যবাসী। একক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভেলোরেই সবচেয়ে বেশি বিল মেটানো হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী থেকে। শুধু তাই নয়, এই বিমা প্রকল্পে মাত্র ১১ মাসে এখানে চিকিৎসা ও অপারেশনের সুবিধা পেয়েছে প্রায় চার হাজার মানুষ!
কী ধরনের পরিষেবা বা অপারেশনের জন্য ভেলোরে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন বঙ্গবাসী? রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের তরফে ভেলোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মোজাম্মেল আহমেদ বলেন, সিংহভাগ ক্লেমই আসছে বড় বড় অপারেশনের জন্য। যেমন হার্টের অপারেশন, ব্রেন ও স্নায়ুর নানা অপারেশন, ক্যান্সার সার্জারি ইত্যাদির জন্য। বাচ্চাদের অপারেশন করাতেও বহু মানুষ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সাহায্য নিচ্ছেন। বেশ কিছু জটিল অস্ত্রোপচারও হচ্ছে স্বাস্থ্যসাথীর সাহায্যে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষদিকে রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী দেশখ্যাত এই হাসপাতাল তথা মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় আসে। অক্টোবর থেকে পুরোদস্তুর কাজ শুরু হয়। কিন্তু এই ১১ মাসের মধ্যে বেশ ক’মাস করোনার বাড়াবাড়ির জন্য বিমান চলাচল বন্ধ ও অনিয়মিত ছিল। ফলে ইচ্ছা থাকলেও বহু মানুষ ভেলোরে প্রিয়জনকে নিয়ে যেতে পারেনি। করোনার দাপাদাপি একটু কমার পর বিমান চলাচল স্বাভাবিক হতেই বাংলার রোগীদের ভিড়ও ফের বাড়তে শুরু করে ভেলোরে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী শাখার এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, এখন কোভিড পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হওয়ার বাংলা থেকে হু হু করে ভেলোরে রোগী যাচ্ছেন। গত কয়েক মাসে গড়ে ছ’কোটি টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ মেটানোর ক্লেম এসেছে শুধুমাত্র ভেলোর থেকেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সবদিক থেকে অত্যন্ত সহযোগিতা করছে।
এদিকে বারবার অনুরোধের পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও এখনও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে কলকাতার বহু মাঝারি ও বড় কর্পোরেট হাসপাতালের সহযোগিতা পাচ্ছে না সরকার। মাঝেমধ্যেই রোগী ফেরানোর অভিযোগ আসছে। তারই মধ্যে অবশ্য রাজ্যে রোজ শুধু স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমেই সাত কোটি টাকার চিকিৎসা খরচ মানুষ পাচ্ছে বিনামূল্যে। এই খাতে সরকারের বাৎসরিক খরচ আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন আধিকারিকরা।