রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

রবীন্দ্র-স্মৃতি রক্ষণাবেক্ষণে অনীহা কেন্দ্রের, নষ্ট হচ্ছে বিশ্বভারতীর বহু স্থাপত্য

September 22, 2021 | 2 min read

করোনা আবহে গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস। ফলে স্তব্ধ স্বাভাবিক পঠন-পাঠন। এই দীর্ঘ সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যশালী একাধিক স্থাপত্য। গত বছরের আগস্টে মৃদু ভূকম্পনে ভেঙে পড়ে ঐতিহ্যশালী পুরনো ঘণ্টাতলা। কিন্তু সেটি পুনর্নির্মাণে কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বেহাল অবস্থা ঐতিহ্যশালী স্থাপত্য চৈত্যেরও। পাঠভবনের যেসব গাছতলায় ক্লাস নেওয়া হতো তার বেশ কয়েকটির বড় বড় ডালপালা ভেঙে পড়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রবীন্দ্রনাথের সাধের পাঠভবন এখন শ্রীহীন। গত বছরের ২৬আগস্ট এক হাল্কা ভূমিকম্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে থাকা শতাব্দী প্রাচীন বটগাছটি ঐতিহ্যশালী পুরনো ঘণ্টাতলা স্থাপত্যের উপর ভেঙে পড়ে। ঘটনার এক বছর পরও সেই ঐতিহ্য রক্ষায় কর্তৃপক্ষের তৎপরতা দেখা যায়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এখনও ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে ঘণ্টাতলা। 

রবীন্দ্রনাথের বৌদ্ধধর্ম প্রীতির নিদর্শন হিসাবে পাঠভবনে সারনাথের বৌদ্ধ স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি হয়েছিল ঘণ্টাতলা। আটের দশকের মাঝামাঝি সেখান থেকে ঘণ্টাটি চুরি যায়। লাগানো হয় নতুন ঘণ্টা। কিন্তু ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত এই ঐতিহ্যশালী স্থাপত্যের পুনর্নির্মাণ না করায় ক্ষোভ বাড়ছে শান্তিনিকেতনে।পাশাপাশি বৃষ্টিতে আর এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য চৈত্যেরও অবস্থাও বেহাল। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বিশ্বভারতীর যাবতীয় বিজ্ঞপ্তি ঝোলানোর জন্য ব্যবহৃত হয় চৈত্য। বর্তমানে তার দেওয়াল থেকে মাটির চাঙড় খসে পড়ছে। দেওয়ালগুলির ভগ্নপ্রায় দশা। চারিপাশে জমেছে শ্যাওলা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহ্যশালী এই স্থাপত্য যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। 

পাঠভবনের পড়ুয়ারা যে সব গাছতলায় ক্লাস করেন তার বেশ কয়েকটির বড় বড় ডালপালা ঝড়-বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ে আছে বলে অভিযোগ।‌ শান্তিনিকেতন বাড়ি লাগোয়া এলাকায় এমন একটি গাছ পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এই দীর্ঘ সময়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। সীমানা প্রাচীর বিতর্ক থেকে শুরু করে কর্মী-অধ্যাপক-পড়ুয়াদের শোকজ, সাসপেন্ড, বহিষ্কার ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। শিক্ষা ও ঐতিহ্যের রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার জেরে জাতীয়স্তরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিংও নিম্নমুখী হয়েছে.এব্যাপারে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিতর্কে জড়িয়ে বিশ্বভারতীর নাম খারাপ হচ্ছে। শিক্ষা ও ঐতিহ্য নিয়ে উপাচার্যের কোনও মাথাব্যথা নেই। তাই বিশ্বভারতীর হাল খারাপ হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উচিত রবীন্দ্র ভাবধারায় তৈরি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করা। আর এক প্রাক্তন ছাত্র অরিন্দম উপাধ্যায় বলেন, ছাত্র অবস্থায় বিশ্বভারতীর বিভিন্ন স্থাপত্য খুব কাছ থেকে দেখেছি। এরমধ্যে পুরনো ঘণ্টাতলা ও চৈত্য অন্যতম। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এগুলি যদি নষ্ট হয় তাহলে এর থেকে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। এব্যাপারে বিশ্বভারতীর প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগের চেষ্টা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#visva bharati university, #Rabindranath Tagore

আরো দেখুন