লকেটের দলবদলের জল্পনার মধ্যেই সাংসদকে তলব করলেন নাড্ডা
হুগলির দলীয় সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে দলে আটকে রাখতে মরিয়া বিজেপি শিবির। লকেট যাতে কোনওভাবেই দল না ছাড়েন, সেটা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মঙ্গলবার বিজেপির (BJP) সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা (JP Nadda) দিল্লিতে তাঁর বাসভবনে লকেটের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। যদিও সেই বৈঠকের বিষয়বস্তু অন্য কিছু ছিল বলেই দাবি করেছেন লকেট।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাকে উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে সহ-পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। সেখানে দু’দিন সফর করে সোমবার সকালেই আমি দিল্লি ফিরেছি। নাড্ডাজি ডেকে পাঠিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ড নিয়ে আলোচনার জন্য। জাতীয় রাজনীতিতে যে সুযোগ আমাকে দেওয়া হয়েছে সেই দায়িত্ব যাতে ভালেভাবে পালন করতে পারি, সেই বিষয়েই তিনি এদিন পরামর্শ দিয়েছেন।”
নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকে তাঁর দল ছাড়ার প্রসঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি বলেও দাবি করেছেন লকেট। উলটে এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “নাড্ডাজি তো জানতেনই না যে এই ধরনের কোনও খবর রটেছে। আমিই বললাম। শুনে তো উনি অবাকই হয়েছেন। বুধবার যোশীজির সঙ্গে আবার আমাদের উত্তরাখণ্ড নিয়ে বৈঠক রয়েছে। সেই সব বিষয়েই কথা হয়েছে।”
লকেট স্বীকার না করলেও নাড্ডা যে শুধু উত্তরাখণ্ড নিয়ে আলোচনার জন্য লকেটকে ডেকেছিলেন, সে কথা মানতে নারাজ ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, বিজেপির তরফে উত্তরাখণ্ডের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীকে। পর্যবেক্ষককে ছাড়াই সর্বভারতীয় সভাপতি সে রাজ্য নিয়ে শুধুমাত্র সহ-পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এমনটা বিজেপিতে সচরাচর দেখা যায় না। লকেটের সঙ্গে এদিন নাড্ডা যে বাংলার বিষয়েই আলোচনা করেছেন তার ইঙ্গিত লকেটের কথাতেই মিলেছে।
তিনি বলেছেন, “নতুন রাজ্য সভাপতির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে বলেই নাড্ডাজিকে জানিয়েছি।” তাঁর সমস্ত কথা নাড্ডাজি মন দিয়ে শুনেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন হুগলির সাংসদ। লকেটকে যে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব গুরুত্ব দিচ্ছে এদিনের বৈঠক থেকে তার প্রমাণ মিলেছে। রাজ্যে দলের ভাঙন যাতে আর বিস্তৃত না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের।
ঘটনার সূত্রপাত দিন কয়েক আগেই আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর থেকেই। তারপরেই হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দল ছাড়ার জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লকেট বৈঠক করেছেন বলেই শোনা গিয়েছিল। যদিও লকেট টুইট করে তা উড়িয়ে দেন।
এদিনও সেই কথাই বলেছেন তিনি। বিজেপি ছাড়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জোর গলায় জানিয়ে এ প্রসঙ্গে যুক্তিও দিয়েছেন লকেট। তিনি বলেছেন, “আমি কেন বিজেপি ছাড়তে যাব? আগামী বছর উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছে। বাংলা থেকে প্রথমবার কোনও মহিলাকে এই ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমার সামনে এখন জাতীয় রাজনীতিতে কাজ করার সুযোগ। তা ছেড়ে আমি রাজ্য রাজনীতিতে নিজেকে কেন সীমাবদ্ধ করব। তার কোনও কারণ তো দেখতে পাচ্ছি না।”