ছ’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ৪১১ কোটি নিয়ে বিদেশে, ৪ বছর পর নড়ল টনক
মোট ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের থেকে সব মিলিয়ে ৪১১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়েছে আরও এক শিল্পপতি। ঠিক যেদিন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া আবার ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার কমানোর ঘোষণা করেছে, সেদিনই জানা গিয়েছে, স্টেট ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে থেকে ব্যাঙ্কের টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ সিবিআইকে করা হয়েছে এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। আর সেই তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পেরেছে ওই শিল্পপতি অনেক আগেই দুবাই পালিয়ে গিয়েছে। এমনকী তাঁর অফিস, কারখানা, উৎপাদন ইউনিট সব গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে ধীরে ধীরে।
দিল্লিনিবাসী ওই শিল্প সংস্থা রামদেব ইন্টারন্যাশনাল বাসমতী চালের রপ্তানিকারী। এছাড়া সংস্থার আরও একঝাঁক বাণিজ্য রয়েছে। ২০১৬ সালে ঋণ পরিশোধ না করার কারণে নোটিশ জারি করে ওই ঋণকে অনুৎপাদী সম্পদ (এনপিএ) হিসেবে স্টেট ব্যাঙ্ক তালিকাভুক্ত করে। কিন্তু তারপর স্টেট ব্যাঙ্কের সিবিআইকে অভিযোগ করতে চার বছর সময় কেন লাগল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অভিযোগ দায়ের করেছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আর সিবিআই মামলা রুজু করেছে গত ২৮ এপ্রিল। তবে লকডাউনের কারণে সিবিআই কোনও তল্লাশি অভিযান চালাতে পারেনি। তবে তদন্ত অগ্রসর করার পর সিবিআই জানতে পেরেছে এই সংস্থার তিন মালিক নরেশ কুমার, সুরেশ কুমার এবং সঙ্গীতা দেবী অনেক আগেই দুবাই পালিয়ে গিয়েছেন। তদন্তে জানা গিয়েছে, শুধু যে ঋণ পরিশোধ না করে ৬টি ব্যাঙ্কের ৪১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়েছে এই সংস্থার মালিকপক্ষ তাই নয়, তাদের জমা দেওয়া কাগজপত্র, ব্যালান্স শিট, অ্যাকাউন্টেও মিথ্যা তথ্য, নথি এবং ডিক্লারেশন পাওয়া গিয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি থেকে একের পর এক শিল্পপতি ও কর্পোরেট সংস্থার মালিক হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত। এর আগে বিজয় মালিয়া থেকে নীরব মোদি তো বটেই, দিল্লি, মুম্বই, গুজরাতের আরও একঝাঁক শিল্পপতিই এই পথ অনুসরণ করে পালিয়েছে। বস্তুত ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্যহানির অন্যতম কারণই হল এই কর্পোরেট মহলের অন্তহীন ঋণ ফাঁকি। অতি সম্প্রতি ইয়েস ব্যাঙ্ক দেউলিয়া ঘোষণা করেছে নিজেকে। আর সেই ব্যাঙ্ককে রক্ষা করতে স্টেট ব্যাঙ্ককে দায়িত্ব দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।। স্টেট ব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে ১২ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করা হবে এই ব্যাঙ্ককে পুনরুজ্জীবনের জন্য। কিন্তু ক্রমেই অডিট ও অ্যাকাউন্টস থেকে জানা যাচ্ছে, ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকেও খ্যাতনামা কর্পোরেট সংস্থাকে বিপুল অর্থ জোগান দেওয়া হয়েছিল।
সিবিআই-এর কাছে জমা পড়া অভিযোগ অনুযায়ী, রাম দেব ইন্টারন্যাশনাল শুধু স্টেট ব্যাঙ্ক থেকেই ঋণ নিয়েছিল ১৭৩ কোটি টাকা। কানাড়া ব্যাঙ্ক থেকে ৭৬ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক থেকে ৬৪ কোটি টাকা। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক থেকে ৫২ কোটি টাকা, কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক থেকে ৩৬ কোটি টাকা এবং আইডিবিআই ব্যাঙ্ক থেকে ১২ কোটি টাকা। সামান্য কিছু ঋণ পরিশোধ করার পরই এই সংস্থা আর কিছুই শোধ করেনি। বরং নতুন করে আবার ঋণের আবেদন করেছিল। প্রায় এক বছর আগেই জানা গিয়েছে মালিকরা নিখোঁজ। অন্য একটি সংস্থার পক্ষ থেকে এই একই কোম্পানির বিরুদ্ধে অর্থ না মেটানোর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনালে। সেই ট্রাইবুনাল যখন রামদেব ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে, তখন জানা যায়, তিন কোম্পানি পরিচালকই দুবাই পালিয়ে গিয়েছে।