২২০০ কিমি গাড়ি চালিয়ে পুণে থেকে কলকাতা,‘যুদ্ধে’ শামিল হতে ঘরে ফিরলেন নবীন ডাক্তার
লকডাউনের মধ্যেই ২২০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে পুণে থেকে কলকাতা। ঝক্কি নেহাত কম নয়। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে অন্য রাজ্যের সীমানার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবস্থাপনার ফারাক কতটা, সেই অভিজ্ঞতা সগর্বে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন নিউ আলিপুরের বাসিন্দা এক নবীন চিকিৎসক রোহিত পান্ডা। ফোনে তিনি বলেন, অনেকে নেতিবাচক কথা বললেও আমার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। অন্যান্য রাজ্যের সীমানায় শুধুমাত্র থার্মাল টেস্টিং হচ্ছে। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সীমানায় রেড জোন থেকে আসা প্রত্যেকের সোয়াব টেস্ট বা লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোয়ারেন্টাইন হোম বানিয়ে সীমানায় প্রত্যেকের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্যভিত্তিক তথ্য খতিয়ে দেখে প্রত্যেকের লালারসের পরীক্ষা করিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেখে তবেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তাই, ফেসবুক পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন রোহিত। আগামীকাল, সোমবার থেকে পিজিতে মেডিসিন বিভাগে তিনি কাজে যোগ দিতে চলেছেন।
পুণেতে এমবিবিএস পাশ করে ইন্টার্ন হিসেবে সেখানকার গ্রামীণ এলাকায় ডিউটি করছিলেন রোহিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই করোনা ভাইরাসের রোগী দেখতে হয়েছিল। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে কাজ করার জন্য আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়ে যায়। গাড়িতে কলকাতায় ফেরার জন্য মহারাষ্ট্র বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ই-পাসের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, মহারাষ্ট্রে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। নবীন এই চিকিৎসক লিখেছেন, মহারাষ্ট্র প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ করে ১০ দিন ধরে কোনও উত্তর পাইনি। শেষ পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বারস্থ হন। তিনি বলেন, ২ মে নবান্নে যোগাযোগ করি এবং পরিবারের তরফে পাসের জন্য আবেদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা পেয়ে যাই।
৩ মে তাঁর গাড়ি রওনা হয় কলকাতার উদ্দেশে। মহারাষ্ট্রের সীমা থেকে হায়দরাবাদ, মাঝে কিছুটা কর্ণাটকের সীমা, তারপর বিশাখাপত্তনম থেকে ভুবনেশ্বর। ওড়িশা সীমানায় এসে দেখেন চূড়ান্ত অব্যবস্থা সেখানে। পরিযায়ী শ্রমিকসহ যাঁরা সীমানা থেকে ঢুকছেন, গাদাগাদি করে বাসে বসিয়ে রাখা কিংবা দূরত্ব বজায় না রেখে লাইন করে দাঁড়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই চূড়ান্ত অব্যবস্থা দেখে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেন বলেই অভিযোগ এই চিকিৎসকের। ফলে, প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় কেটে যায়।
৬ মে, মাঝরাতে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, ৭ মে, রাত সাড়ে ১০টায় নিউ আলিপুরের বাড়িতে পৌঁছন রোহিত। মেদিনীপুরের সীমানায় আসার পথে চোখে পড়েছিল একটি পোস্টার, ‘এই যুদ্ধে দিদি আমাদের সঙ্গে।’ সত্যি সেটা অনুভব করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।