কার্যত ‘কোয়ারেন্টাইনে’ থেকেই পুরীতে রথ তৈরি করছেন ৭২ জন রথসেবক
একপ্রকার ‘কোয়ারেন্টাইনে’ থেকেই প্রভু জগন্নাথদেব, দেবী সুভদ্রা আর ভগবান বলভদ্রের বাহন তৈরির কাজ করছেন ‘রথসেবক’রা। পুরীর জগন্নাথদেবের রথ তৈরির কাজে ছুতোর, দর্জি, রঙের মিস্ত্রি মিলিয়ে মোট ৭২ জন রথসেবক দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। গত মঙ্গলবার পুরীর গ্র্যান্ড রোডের রথখোলায় শুরু হয়েছে তিন দেব-দেবীর বাহন তৈরির কাজ। শ্রীজগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসজেটিএ) সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা বিপর্যয়ের মাঝে লকডাউন পর্বে কার্যত কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে রথসেবকদের। পরিবারের থেকে আলাদা করে তাঁদের রাখা হয়েছে শ্রীগুন্ডিচা, নীলাচল এবং নীলাদ্রি ভক্তনিবাসে। প্রতিদিন নির্মাণ কাজ শেষে সেখানেই ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। লকডাউন বিধি মেনে মাস্ক, গ্লাভস পরে এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করে কাজ করছেন তাঁরা। রথখোলায় যেখানে নির্মাণ কাজ চলছে, সেই এলাকাটিকে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ হিসেবে নির্দিষ্ট করে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে পুরী প্রশাসন।
এসজেটিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪২টি বিশালাকার কাঠ এবং ৮৬৫টি ছোট আকারের কাঠের টুকরো দিয়ে তিনটি রথ নির্মাণের কাজ চলছে। কাঠের কাজের যিনি মূল শিল্পী, বংশপরম্পরায় সেই পরিবারই এই কাজের দায়িত্ব পান। বাকি শিল্পীরাও দীর্ঘ বছর ধরে জগন্নাথদেবের সেবা করে আসছেন।
এসজেটিএ’র ওই সূত্রটি জানিয়েছে, আগামী ২৩ জুন রথযাত্রা। লকডাউন পর্ব শেষে যদি সেই যাত্রার অনুমতি মেলে, তাহলে ভক্তদের কাছে তা হবে পরম প্রাপ্তি। সমস্ত বিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত সংখ্যক লোক নিয়েই রথযাত্রা হবে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, প্রভুর বাহন তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করে রাখতে হবে। হাতে সময় কম, তাই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রথ তৈরির কাজ চলছে। একইসঙ্গে তৈরি হচ্ছে প্রভু জগন্নাথের ৪৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার রথ ‘নন্দীঘোষ’, দেবী সুভদ্রার ৪৪ ফুট উচ্চতার রথ ‘দর্পদলন’ এবং ভগবান বলভদ্রের ৪৫ ফুট উচ্চতার রথ ‘তালধ্বজা’।
জগন্নাথ দেবের রথের জন্য ১৬টি, দেবী সুভদ্রার রথের ১৪টি এবং বলভদ্র দেবের রথের ১২টি চাকা এবং রথ টানার ঘোড়াও তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি বানানো হচ্ছে তিনটি রথের আচ্ছাদনের জন্য ১ হাজার ২৫০ মিটার কাপড়ের রঙিন চাঁদোয়া। চাঁদোয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সবুজ, কালো, হলুদ ও লাল রঙের কাপড়।