স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

প্লাস্টিক পর্দায় সুরক্ষিত পিজি

May 12, 2020 | 2 min read

করোনার কারণে অন্য রোগী-পরিষেবা যাতে ব্যাহত না-হয়, সেই লক্ষ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপের জন্য বার বার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে সুরক্ষাবিধি বজায়ে একাধিক পরামর্শ সত্ত্বেও অনেক চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীর করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের কোনও না কোনও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলছে। এমন পরিস্থিতিতে এখনও পর্যন্ত ব্যতিক্রম এসএসকেএম হাসপাতাল।

চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা আরও পোক্ত করে বহির্বিভাগে পরিষেবা স্বাভাবিক করার দিকে একধাপ এগিয়ে গিয়েছে রাজ্যের এই সেরা সরকারি হাসপাতাল। মেডিসিন এবং সার্জারির বহির্বিভাগে প্লাস্টিকের চাদরে দেওয়াল তৈরি করে রোগী দেখা শুরু হচ্ছে সেখানে। হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মীরা যাতে করোনায় আক্রান্ত না হয়ে পড়েন, সেটাও দেখতে হবে। সে জন্যই প্লাস্টিক ওয়ালের ভাবনা।’

তবে পিজিতে নিরাপত্তার এই বন্দোবস্তের মধ্যেও রোগী দেখা কী ভাবে শুরু করা সম্ভব, তা নিয়ে দোটানায় বেসরকারি ক্ষেত্রের বহু চিকিৎসক। চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠনের তরফেও সুরক্ষাবিধি মেনে রোগী দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা মেনে রোগী দেখা কতটা সম্ভব–ভেবে পাচ্ছেন না অনেকেই। মফস্‌সলের এক জেনারেল ফিজিশিয়ান কৌশিক রায় বলেন, ‘আমার চেম্বারে ৪০০ টাকা ভিজিট। বর্তমান পরিস্থিতিতে দিনে ৫-৬ জনের বেশি রোগী দেখতে পারব না। প্রতিদিন রোগী দেখার জন্য ৪০০-৫০০ টাকার পিপিই কেনা কি সম্ভব? আর সেটা কিনলেই তো হবে না। সঙ্গে থার্মাল গান, পিপিই ফেলার এবং চেম্বার নিয়মিত স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থাও করতে হবে। সেটাও কি সম্ভব?’ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলছেন, ‘আমি লকডাউনের মধ্যেও রোগী দেখেছি। টিকা দিয়েছি। জ্বরে ভুগছে এমন শিশু এবং টিকাকরণের জন্য আসা শিশুদের আলাদা চেম্বারে দেখছি। রিইউজেবল পিপিই ব্যবহার করছি। আর সময়ের ব্যবধান রেখে অ্যাপয়ন্টমেন্ট দিচ্ছি। যাতে দু’জন শিশুকে দেখার মাঝে চেম্বার স্যানিটাইজ করতে পারি।’ তবে তিনিও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সব চিকিৎসকের কি এই পরিকাঠামো আছে? সরকারের উচিত, বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসকদের জন্য একটা গাইডলাইন দেওয়া।’

এক করোনা-আক্রান্তের খোঁজ মেলার পর এপ্রিলের গোড়ায় আতঙ্ক অবশ্য ছড়িয়েছিল এসএসকেএমেও। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই একাধিক পদক্ষেপ করেন কর্তৃপক্ষ। কোভিড ম্যানেজমেন্টে তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মীদের প্রত্যেককেই করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার ট্রেনিং দেওয়াও চলছে। লকডাউন চলায় বহির্বিভাগে রোগীর চাপ কম। কিন্তু লকডাউন শিথিল হতে শুরু করলেই বাড়বে সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীদের সুরাক্ষা নিশ্চিত করে কী ভাবে রোগী দেখার ব্যবস্থা করা সম্ভব, হাসপাতালের অন্দরে সে নিয়ে চর্চা শুরু হয়। অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন, পরীক্ষামূলক ভাবে ‘কেরালা মডেল’ অনুসরণ করার। কোভিড ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘কেরালার কিছু হাসপাতালে চিকিৎসকেরা প্লাস্টিকের পর্দার ওপার থেকে রোগী দেখছেন। চিকিৎসক সরাসরি রোগীর শরীর থেকে বেরোনো এরোসলে এক্সপোজড হচ্ছেন না। আমাদের এখানেও সে রকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

ঠিক কী রকম সেই ব্যবস্থাপনা?

হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে সার্জারি এবং মেডিসিনের বহির্বিভাগে দু’টি করে ঘরে প্লাস্টিকের একটি ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। একজন রোগী প্রথমে এসে সেই ছোট প্লাস্টিকের ঘরে দাঁড়াবেন। প্লাস্টিকের ওই ঘরের মধ্যে একটা ছোট জানলার মতো অংশ চেন দিয়ে যুক্ত থাকবে। পিপিই পরা একজন চিকিৎসক সেই জানলার মধ্যে দিয়েই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন রোগীর। একই ঘরে খানিক দূরে বসে থাকা অন্য চিকিৎসক লিখবেন প্রেসক্রিপশন। ভিজিটিং ডাক্তার দুই ঘরে পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবেন। শুধু বহির্বিভাগই নয়, ভর্তি থাকা রোগীর পরিজনদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই যাতে কথা বলতে পারেন ডাক্তাররা, সে জন্য কয়েকটি ওয়ার্ডেও প্লাস্টিকের পর্দা বসানো হয়েছে।

তথ্যসূত্র: মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য, এই সময় পত্রিকা

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Health, #sskm hospital, #plastic screens

আরো দেখুন