বিজেপির শক্ত ঘাঁটি মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে
পুরাতন মালদহ ব্লকে বিজেপির দখলে থাকা মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত সোমবার তাদের হাতছাড়া হল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এই পঞ্চায়েত বিজেপির গড় বলে বরাবরই পরিচিত ছিল। বিজেপির প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে এদিন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যরা প্রধানকে অপসারিত করেন। স্বাভাবিকভাবেই পুরাতন মালদহে বিজেপির দখলদারি কমে গেল। একই ভাবে একের পর এক পঞ্চায়েত হারিয়ে ব্লক থেকে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বসেছে গেরুয়া শিবির। ব্লকে আর একটি মাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত তাদের দখলে রয়েছে। তৃণমূল সেই পঞ্চায়েতের দখল নিতে পারলেই ব্লক বিজেপি শূন্য হয়ে যাবে।
ক্ষমতায় থাকাকালীন বিজেপি পঞ্চায়েত পরিচালন নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হওয়ায় প্রধানের বিরুদ্ধে আস্থা হারিয়ে তৃণমূলে যোগদান করেন একঝাঁক পঞ্চায়েত সদস্য। তাতেই হিসেব ওলোট পালোট হয়ে যায়। এদিন তলবি সভায় পঞ্চায়েতের ১৬ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জন তৃণমূল সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে ভোট দেন। এতে প্রধান অপসারিত হন। এই ঘটনায় একদিকে যেমন তৃণমূল শিবির উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছে, তেমনি বিষাদের সুর নেমে এসেছে বিজেপি শিবিরে।এবিষয়ে বিজেপির মালদহ জেলা নেতা তথা উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত জোন কনভেনর শ্যামচাঁদ ঘোষ বলেন, তৃণমূল ভয়ভীতি, প্রলোভন দেখিয়ে বিজেপি সদস্যদের দলে টেনে পঞ্চায়েত দখল করছে। তবে এভাবে ক্ষমতায় এসে তাদের লাভ হবে না। মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবে। তৃণমূলের পুরাতন মালদহ ব্লক নেতা জওহর ঘোষ বলেন, বিজেপির দখলে থাকা মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত আমরা দখল নিয়েছি। ওই পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রতীকে জেতা সদস্যরা তাদের দলের প্রতি আস্থা হারিয়ে আমাদের সঙ্গে এসেছেন। তাঁদের আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আগামিদিনে ঐক্যবদ্ধভাবে পঞ্চায়েত পরিচালনা হবে। আর একটিমাত্র পঞ্চায়েত সাহাপুর দখল নিতে বাকি। সেটি হয়ে গেলে বিজেপি মুক্ত ব্লক হবে। পুরাতন মালদহের বিডিও ভি তেজা দীপক বলেন, মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অনাস্থার তলবি সভায় এদিন প্রধান অপসারিত হয়েছেন।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরাতন মালদহ ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টি আসন জিতে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করেছিল বিজেপি। হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পাঁচটি আসন পায় তৃণমূল, একটি আসন পায় কংগ্রেস। তবে শুধু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নয় বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে ওই পঞ্চায়েতে বিজেপির দখলদারি ছিল। পরবর্তীতে অবশ্য তৃণমূল সাময়িক ভাবে ক্ষমতায় ছিল। বিজেপি কার্যত এভাবেই উত্থান পতনের মধ্যদিয়ে পঞ্চায়েত এলাকায় নিজেদের গড় অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছিল। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মুচিয়া পঞ্চায়েতের বিজেপির একাধিক পঞ্চায়েত সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এনিয়ে বিজেপির অন্দরে এক বছর ধরে ডামাডোল পরিস্থিতি চলছিল। শেষ পর্যন্ত সম্প্রতি পাঁচ জন সদস্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। তাতেই বাজিমাত করে নেয় তৃণমূল। একদা পদ্ম ফুলের বাগানে ঘাসফুলের চাষ শুরু হয়ে যায়। বিজেপির সদস্যরা তৃণমূলে এলে পাঁচ থেকে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে নেয়। পরবর্তীতে আরও এক সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। সম্প্রতি তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত সদস্যরা বিজেপি প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সই করে বিডিওকে জমা দিয়েছিলেন। এদিন সাড়ে ১১টা নাগাদ নির্ধারিত সময়ের তলবি সভা শুরু হয়। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কড়া পুলিসি প্রহরায় সাড়ে ১২টার মধ্যে প্রধান পক্ষ গরহাজির থাকায় কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত দখল করে তৃণমূল। শুধু মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত নয়। ব্লকের মোট ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ভাবুক, মঙ্গলবাড়ি, সাহাপুর ও বিজেপির দখলে এসেছিল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওই পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে ভাবুকে প্রধান এবং মঙ্গলবাড়িতে উপপ্রধান পদ বিজেপি রক্ষা করতে পারেনি। সম্প্রতি তৃণমূল ওই পঞ্চায়েতে একের পর এক অনাস্থা এনে বিজেপিকে উপড়ে ফেলেছে। এদিন মুচিয়াতেও সেই ধারা অব্যাহত রাখল।