করোনাকালেও বৃদ্ধি পেয়েছে বঙ্গ অর্থনীতি, স্বীকার করল মোদী সরকার
ফের নয়া নজির গড়ল পশ্চিমবঙ্গ। করোনা অতিমারির মধ্যে গত অর্থ বছরে যেখানে ভারতের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে, সেখানে রাজ্যের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অব্যাহত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে গঠিত ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ নীতি আয়োগ-এর তরফে এই ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ মহল।
বুধবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে সিআইআই আয়োজিত ‘ইস্ট ইন্ডিয়া সামিট ২০২১’-এ নীতি আয়োগ সিইও অমিতাভ কান্ত বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থ বছরে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে শুধুমাত্র চার রাজ্য- পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, সিকিম ও বিহারেই আর্থিক বৃদ্ধি ঘটেছে।’ এই আর্থিক বৃদ্ধিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতকে সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কিন্তু, করোনা অতিমারিতে যেখানে বিশ্বের অর্থনীতির অধোগতি ঘটেছে, ভারতের অর্থনীতি সঙ্কোচনের ক্ষেত্রে নয়া রেকর্ড গড়েছে, সেখানে কোন জাদুদণ্ডে উলটপুরাণ পশ্চিমবঙ্গে? অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও জাদুদণ্ড নয়, রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সমাজের প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের হাতে নগদ পৌঁছে দেওয়ার যে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়েছে, তারই সুফল হিসাবে করোনাভাইরাসের ছোবল ভোঁতা করে সামনের দিকে এগিয়েছে বাংলার অর্থনীতি।
শিল্পপতি হরিমোহন বাঙুরের কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতিতে মহারাষ্ট্র, কর্নাটকের মতো রাজ্যগুলির তুলনায় কোভিড-প্রভাব কম পড়েছে। কারণ, গত দশ বছরে বাংলার গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন অনেক বেশি হয়েছে। গ্রাম বাংলার বাসিন্দাদের হাতে নগদের জোগান বাড়ায় কোভিডের মধ্যেও তাঁরা কেনাকাটা করেছেন।’
অর্থনীতিবিদরা এটাকে ‘কেইনসিয়ান মাল্টিপ্লায়ার’ রূপে অভিহিত করেন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ধারাবাহিক ভাবে বলে আসছেন, ভারতের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত চাহিদা সৃষ্টি করার নীতি গ্রহণ করা। কিন্তু, বদলে নয়াদিল্লি বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য যে একগুচ্ছ ঘোষণা করেছে, তাতে অর্থনীতির কোনও উপকার হচ্ছে না বলে রাজ্য সরকার তার সমালোচনায় মুখর।
করোনা-ধ্বস্ত ভারতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের প্রেসক্রিপশন, প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের হাতে নগদ জোগানের ব্যবস্থা করুক সরকার। কারণ, নিম্নবিত্ত মানুষ ১০০ টাকা পেলে তার প্রায় পুরোটাই খরচ করে। এতে বাজারে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বাড়লে আপনাআপনি কল-কারখানার উৎপাদন বাড়বে। ফলে, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির দ্রুত পুনরুজ্জীবন ঘটবে।
পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবার, মহিলা, বেকার যুবক-যুবতী, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একগুচ্ছ সামাজিক ও আর্থিক সহায়তা প্রকল্প চালাচ্ছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পে যেমন ছাত্রীদের নিখরচায় সাইকেল ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, তেমনই একাদশ শ্রেণির প্রায় ১০ লাখ পড়ুয়াকে পড়াশোনা করার জন্য ট্যাব কিনতে এককালীন ১০,০০০ টাকা করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বছরও তা দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। আবার কোভিডে কাজ হারানো ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদেরও পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার মধ্যেও সরকারের এই সমস্ত প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষ আর্থিক সহায়তা পাওয়ায় সামনের দিকে এগিয়েছে রাজ্যের অর্থনীতি।