এক বিরলপ্রতিভার কবির জীবন

যে কোনও লেখকের কলম ছুটিয়ে চলার অনুপ্রেরণা হিসেবে এ দু’টি কথা অনেক ইন্ধন জোগায়। ক্ষণজীবীতা যে কেবল ক্ষণজীবী প্রভাই ছড়ায় না, তার অনবদ্য দৃষ্টান্ত কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। তার কর্ম তার বয়সকে, এমনকি তার জীবনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং তার এই অতিক্রান্ত প্রতিভা আজও জ্বলন্ত বাংলা সাহিত্যে।

May 13, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

সুকান্ত – এক বিরল প্রতিভাধর কবি

“দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা,
আমি যে বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা…”

যে কোনও লেখকের কলম ছুটিয়ে চলার অনুপ্রেরণা হিসেবে এ দু’টি কথা অনেক ইন্ধন জোগায়। ক্ষণজীবীতা যে কেবল ক্ষণজীবী প্রভাই ছড়ায় না, তার অনবদ্য দৃষ্টান্ত কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। তার কর্ম তার বয়সকে, এমনকি তার জীবনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং তার এই অতিক্রান্ত প্রতিভা আজও জ্বলন্ত বাংলা সাহিত্যে।

সুকান্ত সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন ভারতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মাধ্যমে। ১৯৪৪ সালেই ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’ এর প্রকাশনায় তিনি ‘আকাল’ নামে একটি সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করেন। একদিকে পার্টির কাজ, অন্যদিকে কলমযুদ্ধ, অভাব অনটন…সব মিলিয়ে অনিয়মের স্রোত তার রুগ্ন শরীর মেনে নিতে পারেনি; যক্ষ্মারোগ বাসা বাঁধে এই অনিয়মের ফাঁকে ফাঁকে।

সুকান্ত সূর্যের কাছে ‘রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটিকে’ উত্তাপ দেবার জন্য পরম আকুতি জানিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু কখনো নিজেকে রক্ষার জন্য কারো কাছে হাত পাততে পারেননি। যে নিজেকেই মানবতার, আর্তের রক্ষক নিযুক্ত করেছে তাকে রক্ষা করবে কে? কেউ পারেনি, তাই সুকান্ত তার জীবনাঙ্কের সবটুকু বেঁচে যেতে পারেননি। তার রাজনৈতিক জীবন, তার সাহিত্য জীবন এমনভাবে ‘ব্যক্তি সুকান্ত’কে গ্রাস করে নিয়েছিলো যে তার ব্যক্তিজীবনকে থেমে যেতে হয় অকাল মৃত্যুতে।

সুকান্তের লেখনী গভীরভাবে প্রভাবিত হতো তার সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গী ও সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে। চারপাশের মানুষকে নিয়ে সুকান্তের যে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি ছিলো, তাই তিনি ঢেলে দিতেন কলমে-কাগজে। তার অনুভূতিগুলো এতই প্রখর ছিল যে তা প্রকাশ করতে গিয়ে কলম হয়ে উঠতো তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর।

পদ্য কী করে গদ্যের চেয়েও বেশী সত্য হয়ে ওঠে, সুকান্ত তো তা বারবারই দেখিয়ে দিয়েছেন তার মূর্তমান কবিতায়। কবিতা যে শুধু অদেখা, অছোঁয়া বা বিমূর্তই নয়- সুকান্তের কবিতার মূর্ততা আপনি আপনার পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়েও অনুভব করতে পারবেন।

সুকান্ত ভট্টাচার্য কানে একটু কম শুনতেন ঠিকই, কিন্তু সর্বহারার আর্তচিৎকার শুনতে একদম ভুল করেননি। সুকান্তের কবিতার সহজ সরলতা অনেককে আশ্চর্য ও মুগ্ধ করেছে, সেই সরলতার সমগ্র তাৎপর্য সকলের কাছে ধরা পড়েনি; কারণ আমরা শুধু প্রকাশভঙ্গিটাই বুঝতে চাই-বার্তাটি নয়!

সুকান্তের জীবন ও কাব্য ছিলো একই সুরে গ্রথিত ও একই মন্ত্রে অনুরণিত। তাই কোন এক অংশকে আলাদা করে বলা যায় না…বলতে হলে সমান্তরালভাবে, একসাথেই বলতে হয়। সুকান্ত ভট্টাচার্য তার কোন বই-ই প্রকাশিত হবার পর দেখে যেতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘ছাড়পত্র’, এবং এরপর অন্যগুলোও।

১৯৪৭ সালের ১৩ই মে সুকান্ত ভট্টাচার্য কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen