বিধানসভা অধিবেশনের ইতিহাস এবার মিলবে ডিজিটালে
রাজ্য বিধানসভার তামাম অধিবেশনের ইতিহাস এবার কম্পিউটারের মাউসের এক ক্লিকেই মিলবে আমজনতার কাছে। বাড়ি বা নিজ দপ্তরে বসে এই পরিষেবা পেতে ইন্টারনেট ছাড়া কোনও বাড়তি খরচ লাগবে না আগ্রহীদের। ব্রিটিশ আমল থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত যাবতীয় অধিবেশন সংক্রান্ত নথি বর্তমানে অন্তত ৮০০ বইয়ে বন্দি হয়ে রয়েছে। লাইব্রেরিতে অনেক ঝঞ্ঝাট করে রাখা এই বই-বন্দি তথ্যই এবার ডিজিটাল ফর্মে আনার কাজ শুরু করেছে বর্তমান বিধানসভা কর্তৃপক্ষ। আর কাজ শেষ হলেই আমজনতার সুবিধার্থে তা আপলোড করা হবে বিধানসভার ওয়েবসাইটে। কেন্দ্রীয় সরকারি বিশেষজ্ঞ সংস্থা এনআইসি’কেই বরাত দেওয়া হয়েছে এই ‘ডিজিটাল লাইব্রেরি ওয়ার্ক’-এর। এজন্য আপাতত খরচ ২৬ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে। যদিও তার অঙ্ক আগামী দিনে আরও কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্য বিধানসভা ভবনের লাইব্রেরিতেই সাধারণত অধিবেশন সংক্রান্ত যাবতীয় নথি ও তথ্যের হদিস মিলে থাকে। বিধায়ক বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ছাড়াও রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে গবেষক—কাজের প্রয়োজনে সকলকেই দ্বারস্থ হতে হয় এই লাইব্রেরির। অতীত দিনের অধিবেশনে কোন বিষয়ে তৎকালীন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাঁদের ভাষণে কী ধরনের বক্তব্য রেখেছিলেন তার পুঙ্খানুপুঙ্খ রেকর্ড থাকে প্রসিডিংস সংক্রান্ত বাঁধানো বইয়ে। একইভাবে এই বইয়েই জানা যায় কবে, কোন আইন বা বিধি রাজ্যের এই আইনসভার মাধ্যমে পাশ হয়েছে। সেই আইনের পক্ষে বা বিপক্ষে কোন দল ভোটাভুটিসহ কী ভূমিকা নিয়েছিল তার হদিস পাওয়া যায় তাতে। একইভাবে খোঁজ মেলে আন্তর্জাতিক, জাতীয় বা রাজ্য স্তরে তৎকালীন সময়ে চর্চিত গুরুত্বপূর্ণ নানা ইস্যুর উপর আসা প্রস্তাবের ফলাফল সংক্রান্ত ইতিহাসেরও। ফলে রাজ্যের পরিষদীয় রাজনীতির অতীত সম্পর্কে এক ঝটকায় অনেক তথ্যই হাতের মুঠোয় এনে দিতে সাহায্য করে এই ‘প্রসিডিংস বুক’। উল্লেখ্য, ফি অধিবেশনের শেষেই এই বই তৈরি করে বিধানসভা কর্তৃপক্ষ। যদিও খসড়া তৈরি থেকে শুরু করে ছাপানো এবং বাঁধাইয়ের কাজ শেষ করতে অধিবেশনের পর কয়েক মাস লেগে যায় সময়ের নিরিখে।
১৮৩৭ সালে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক প্রজা পার্টি ও মুসলিম লিগের জোট সরকারের সময় নবগঠিত ভবনে অনুষ্ঠিত প্রথম বিধানসভা অধিবেশনের ইতিহাস দিয়ে কিন্তু লাইব্রেরিতে রক্ষিত প্রসিডিংস বুক-এর যাত্রা শুরু নয়। আসলে এই যাত্রার সূচনা রাজ্যে পরিষদীয় প্রথা চালুর আঁতুরকাল থেকেই। সেটা ১৮৬২ সাল। ব্রিটিশ আমলে তদানীন্তন লেঃ গভর্নর জন পিটার গ্রান্টের নেতৃত্বের মাত্র ১২ জন মনোনীত সদস্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল পরিষদীয় পরিষদ বা লেজিসলেটিভ কাউন্সিল। ধীরে ধীরে তা বেড়ে এক সময় ১২৫ জন সদস্যের পরিষদে পরিণত হয়। তারপর নয়া আইনের মাধ্যমে তৈরি হয় বিধানসভা। ৩৩ বিঘা জমির উপর ১৯২৮ সালে নয়া ভবনের শিলান্যাস করা হয়। মাত্র ২ বছর ৭ মাসের রেকর্ড সময়ের মধ্যে বিশাল ভবনটি তৈরি হয়। তখন থেকেই লাইব্রেরিতে এই প্রসিডিংস বুক সংরক্ষণের বন্দোবস্ত শুরু হয়। তবে সময় ও নানা সময়ে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বইগুলির সংরক্ষণ এখন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে লাইব্রেরির এই গুরুত্বপূর্ণ অংশের ডিজিটালাইজেশন নিয়ে উদ্যোগী হন বর্তমান অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, কিছু আগে আমরা এই কাজে হাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই কাজ শেষ হলে এই বিপুল পরিমাণ বইয়ের ইতিহাস বিধানসভার ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। ফলে আগ্রহীরা ঘরে বসেই পরিষদীয় রাজনীতির অতীতের ইতিহাস জানতে পারবে নিমেষে।