লকডাউনে ক্রেতা না মেলায় রোজগার বন্ধ জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের
জঙ্গলের শালগাছ থেকে শালপাতা সংগ্রহ করেই দিন গুজরান করেন ওঁরা। দেশে আচমকা করোনা ভাইরাসের থাবায় লকডাউন হয়ে যাওয়ায় সেই পাতা সংগ্রহের কাজ বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। তবে তৃতীয় দফা লকডাউনের শুরুতেই কয়েকটি কর্মক্ষেত্র সচল করায় সায় দিয়েছে কেন্দ্র সেইমতো এ রাজ্যে প্রশাসন চা-বাগান খোলার পাশাপাশি জঙ্গল থেকে পাতা ও অন্যান্য বনজ সম্পদ সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে।
তাই ফের জঙ্গলমুখী বাঁকুড়ার অরণ্য লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা। তবে কেন্দ্র-রাজ্যের এই বিশেষ ছাড় সেভাবে স্বস্তি ফেরাল না তাঁদের। শালপাতা সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে এলেও বাজারে সেভাবে চাহিদা নেই। মিলছে না ন্যায্য দাম। ফলে পরিশ্রমই সার। যে তিমিরে এঁরা ছিলেন, রয়ে গিয়েছেন সেখানেই।
বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রানিবাঁধ, বারিকুল, রাইপুর, সারেঙ্গা, তালডাংরা থেকে সোনামুখী, পাত্রসায়ের, বিষ্ণুপুর – সর্বত্র এই একই ছবি। বাসিন্দাদের তুলে আনা জঙ্গলের শালপাতা বাড়ির দালানেই পড়ে রয়েছে। সাধারণভাবে বসন্তের শুরুতে জঙ্গলের শাল গাছ থেকে পাতা পাওয়া যায়। জঙ্গলঘেঁষা গ্রামের দরিদ্র মানুষজন জঙ্গল থেকে শাল পাতা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এই কাজে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় মহিলা ও শিশুদের। ঝুড়ি, বস্তা নিয়ে ভোর থেকেই জঙ্গলে পাতা সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। মজুত শাল পাতা পরে বাইরে থেকে পাইকারদের কাছে বিক্রী করে রোজগার হয়। তা দিয়েই চলে সংসার।
তবে এবার ছবিটা অন্য। এই জেলায় সেভাবে করোনা ভাইরাসের দাপট না থাকলেও, লকডাউনের ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে সকলকেই। কাজ বন্ধ হওয়ায় কিছুদিন কষ্টেশিষ্টে দিন কাটানো। তবু যে পাতা সংগ্রহে ছাড় পাওয়া গেল, সেই সুযোগও সেভাবে কাজে আসছে না। কারণ, লকডাউনের জন্য এবার বাইরে থেকে পাইকাররা গ্রামে আসতে পারছেন না। তাই শালপাতা বিক্রী সেভাবে হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা আক্ষেপ করছেন। এই দুর্দিনে শালপাতা বিক্রী না হওয়ায় হতাশ দিন আনা দিন খাওয়া জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা।
বন্দীদশায় তাঁদের জন্য ছাড়। কিন্তু সব কাজেরই তো নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা পদ্ধতি রয়েছে। ক্রেতাদের কাছেই যদি না পৌঁছনো যায়, তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পাতা সংগ্রহ করে লাভ কী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন শাল-মহুলের দেশের বাসিন্দারা। কাজে ফিরেও তাই আশার আলো দেখছেন না তাঁরা।