একডালিয়ার প্রতিমার বেনারসী নিজে পছন্দ করে কিনলেন মন্ত্রী সুব্রত
নিষ্ঠা-ভক্তি-পরম্পরার মেলবন্ধন এখানে। পাওয়া যায় না থিমের ঢক্কানিনাদ। রাস্তার ধারে নেই দর্শক টানার হোর্ডিং। মাতৃপ্রতিমা দেখলে অজান্তেই বুকের কাছে এসে মেলে দু’হাত। ঠোঁটজোড়া অস্ফুটে বলে ওঠে, সবাইকে ভালো রেখো মা। পুজোর দলিলে একডালিয়া সত্যিই চিরসবুজ, এভারগ্রিন! এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। তাই মায়ের জন্য বেনারসী কিনতে দোকানে ছুটলেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আর রাজপথের উল্টো দিকে থাকা সিংহি পার্ক ফিরে গেল অতীতে। মণ্ডপে মা আসবেন ডাকের সাজে। এবার তাদের নিবেদন চেতনা। একডালিয়া এভারগ্রিন দুর্গাপুজো কমিটির সভাপতি সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ভোটের কাজ সামলে হাজির হন কলেজ স্ট্রিটের এক প্রসিদ্ধ বস্ত্র বিপণিতে। মা দুর্গা সহ সন্তানদের কাপড় পছন্দ করলেন নিজেই। জানালেন, মা দুর্গার জন্য লাল বেনারসী। লক্ষ্মী ও সরস্বতী পরবেন যথাক্রমে বেগুনি এবং হলুদ বেনারসী। কার্তিক, গণেশ এমনকী অসুরের জন্য কেনা হল নতুন কাপড়। যা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে প্রতিমা শিল্পী সনাতন রুদ্র পালের গোলায়। উল্টোডাঙার গুরুদাস দত্ত গার্ডেন লেনে গিয়ে দেখা গেল, মধ্য ষাটের সনাতনবাবু নিজের হাতে সাজিয়ে তুলছেন একডালিয়ার মা দুর্গাকে। প্রতিমার গায়ে কাগজে লেখা, কেউ ছবি তুলবেন না। সনাতনবাবু বললেন, প্রচুর লোকে ছবি তুলতে আসে, কাজের অসুবিধা হয়। তাই এমন নির্দেশ। ৭৯ বছরে পা দিয়েছে একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজো। মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। ভিতরে থাকবে দেবদেবীর মূর্তি। প্রতিমার চালচিত্রে থাকবে অভিনবত্ব। তবে গড়িয়াহাট রোড থেকে বড় আলোর গেট কমানো হয়েছে। তাতে রাস্তা প্রশস্ত থাকবে। পুরোহিত, তাঁর সহযোগী, পুজোর কাজে যুক্ত সদস্যরা ডবল ভ্যাকসিন প্রাপ্ত বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তিন দিন পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়িতে পৌঁছে যাবে ভোগ।
৮০ বছরে পা দিয়েছে সিংহী পার্ক সর্বজনীন। এবারে তাদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে মাতৃ প্রতিমা। সাবেকি মূর্তি। গোটা বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা দিতে সাদা রংকে বেছে নিয়েছেন পুজোর কর্মকর্তারা। পুজো কমিটির কর্তা অভিজিৎ মজুমদার বলেন, প্রতিমার শ্বেত-শুভ্র সাজ বহন করবে শান্তির বাণী। দীর্ঘ ৩০ বছর পর ডাকের সাজে প্রতিমা এবার। প্রতিমা শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পাল বললেন, বিভিন্ন রঙের থিমের চাকচিক্য থাকলেও অন্তরের আনন্দ দেয় সাদা রং।
সিংহী পার্কের মণ্ডপেও থাকছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বার্তা। হাওড়ার একটি নার্সারিতে প্রায় ১৩০০ গাছ দুই-আড়াই ফুট উচ্চতায় বড় করে তোলা হয়েছে। সেগুলি স্থান পাবে মণ্ডপে। অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও গাছের বিকল্প নেই, সেই বার্তাই ফুটিয়ে তোলা হবে। পুজো মিটলে গাছগুলি পল্লিবাসীদের হাতে তুলে দিতে চান কর্তারা।