‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ মানছে না বাংলা
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আগামী দু’মাস নিখরচায় চাল-গম দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পাশাপাশি, এক দেশ এক রেশন কার্ড কর্মসূচীর প্রসঙ্গ পাড়লেন কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর বক্তব্য, আগামী বছরের মার্চে গোটা দেশে এই রেশন কার্ড তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন, এক রাজ্যের মানুষ আর এক রাজ্যে গিয়েও এই ডিজিটাল কার্ড দেখিয়ে রেশন তুলতে পারবেন।
নির্মলার এই ঘোষণার পরক্ষণেই রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়ে দেন, রেশন কার্ড নিয়ে এই প্রকল্পটি পুরনো। বাস্তবসম্মত নয় বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে না। গত বছর নভেম্বরে বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্মলা জানান, ইতিমধ্যে দেশের ৬৭ কোটি নাগরিক এই কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। সব নাগরিককে রেশন দেওয়াই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে জ্যোতিপ্রিয়র বক্তব্য, ‘বাংলায় প্রায় ১০ কোটি মানুষকে রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বলা চলে একশোভাগ মানুষকে রেশন দেওয়ার কর্মসূচী এ রাজ্যে ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হচ্ছে।’ তাঁর দাবি, ‘খাদ্য সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে আরও প্রায় চার কোটি মানুষকে খাদ্যসাথী প্রকল্পে রেশন দোকান থেকে চাল-গম দেয় পশ্চিমবঙ্গ।’
কেন কেন্দ্রের এক দেশ এক রেশন কার্ড কর্মসূচীতে বাংলা অংশ নিচ্ছে না তার ব্যাখ্যা দেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলার সঙ্গে অন্য রাজ্যের রেশন ব্যবস্থার মৌলিক ফারাক রয়েছে। এ রাজ্যে প্রত্যেক নাগরিকের নামে রেশন কার্ড ইস্যু করা হয়। বাকি রাজ্যগুলিতে রেশন কার্ড পরিবার ভিত্তিক।
সীতারামন এদিন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য গুচ্ছ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। সেখানেই তিনি রেশন কার্ডের প্রসঙ্গ তোলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, ভবিষ্যতে পরিযায়ী শ্রমিকেরা দেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন রেশন পেতে সমস্যা হবে না। জ্যোতিপ্রিয়র প্রশ্ন, কোনও পরিযায়ী শ্রমিক যদি পরিবারকে নিজের রাজ্যে রেখে অন্যত্র রেশন কার্ডটি সঙ্গে নিয়ে চলে যান, তাহলে পরিবার কী করে রেশন পাবে? আমরা তাই পরিবার পিছু একটি কার্ড ইস্যুর পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছি।
তাঁর বক্তব্য, আমরা বরং বলছি মাথা পিছু কার্ড ইস্যু করলে, যে শ্রমিক বাইরে যাবেন তিনি তার কার্ডটি সঙ্গে নিয়ে যাবেন। ভিন রাজ্যে গিয়ে তিনি সেই কার্ড দেখিয়ে সেখানকার রেশন দোকানে নাম লিখিয়ে নিতে পারবেন। যেমনটা ভোটার তালিকার ক্ষেত্রে করা হয়। এই ব্যবস্থা চালু করা গেলে দেশের যে কোনও প্রান্তে গিয়েই যে কেউ রেশন তুলতে পারবেন। পরিবারও সমস্যায় পড়বে না।