ব্রিটেনের আকাশেও পেঁজা তুলোর মতো শরতের মেঘ জানান দিচ্ছে ‘মা আসছেন’
দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। শারদোৎসবের আমেজে বাঙালির মনে এখন আনন্দ। কেবল পশ্চিমবঙ্গই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী বাঙালি এই সময়টায় মেতে ওঠেন উমা-বন্দনায়। কাশ ফুল, ঝরা শিউলি না থাকলেও ব্রিটেনের আকাশেও পেঁজা তুলোর মতো শরতের মেঘ জানান দিচ্ছে ‘মা আসছেন’। ইতিমধ্যেই চতুর্দিকে শুরু হয়ে গিয়েছে সাজো সাজো রব। ১৭ই অক্টোবর পযর্ন্ত উৎসবের প্রতিটি দিনের পরিকল্পনা চলছে জোরকদমে।
২০১৯ সালে পথচলা শুরু হয় ‘আড্ডা’র। বিদেশ-বিভুঁইয়ে ‘আরও বেঁধে বেঁধে থাকা’র বার্তাকে সামনে রেখেই মাতৃ-বন্দনায় মেতে ওঠেন এই পুজোর উদ্যোক্তারা। কলকাতার বিখ্যাত ম্যাডক্স স্কোয়ারের পুজোর মতোই এই পুজোর মূল আকর্ষণ হল ‘আড্ডা’। উদ্ভাবনী ভাবনার জোরে মাত্র দু’বছরেই ব্রিটেনের অন্যতম সেরা হয়ে উঠেছে এই পুজো। প্রথম বছরের পুজোয় স্লাও ক্রিকেট ক্লাবে মণ্ডপ করেছিল ‘আড্ডা’। এবার মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কোভিড আর উম-পুন ঘূর্ণিঝড়ের পরে কলকাতা ও সুন্দরবন এলাকায় ৫ লক্ষ টাকা সাহায্য পাঠানো হয়েছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এবছর তাঁদের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল মণ্ডপের গেট। বর্ধমানের অগ্রদ্বীপের কারিগরদের নির্মিত কাঠের পুতুল দিয়ে তৈরি হয়েছে সুদৃশ্য গেটটি। সহযোগিতা করেছে ‘বাংলা নাটক ডট কম’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
পুজো মানেই নতুন ফ্যাশন। ব্রিটেনে বাঙালি পোশাকের জনপ্রিয় বুটিক ‘মিয়োসূত্র’-এর প্রতিষ্ঠাতা রোশনি মুখোপাধ্যায় ‘বর্তমান’কে বলেন, ‘ভারতে তাঁতিদের দুরবস্থার জন্য সবাই উদ্বিগ্ন। কোভিডের কারণে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তন্তুবায় সমাজ। তাই বর্তমানে মানুষ সচেতন হয়েই তাঁত বা হ্যান্ডলুম শাড়ি কিনছেন। মসলিন শাড়ির চাহিদাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মও আমাদের লন্ডন স্কাইলাইন শাড়ি, ধুতি বা হ্যারি পটার প্রিন্টের মতো ট্রেন্ডি শাড়ি কিনছে। অনেকে আবার আমাদের এখানে এসে দু’টি ঐতিহ্যবাহী শাড়ির ফিউশনের খোঁজ করছেন। এই শাড়ির জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে। সব মিলিয়ে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এবছর ফ্যাশনদুরস্ত পুজো উদযাপন করতে চাইছেন।’ একইসঙ্গে এবারের পুজোয় পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও ছড়িয়ে দিতে চাইছে ‘মিয়োসূত্র। রোশনির কথায়, ‘আমরা মানুষকে পুরনো কাপড় রিসাইকেল করতেও উৎসাহিত করছি। অনেক পরিবার পুরনো বালুচরি কিংবা পাটোলা শাড়ি পুনর্ব্যবহার করে প্রতিটি সদস্যের জন্য ট্রেন্ডি কিছু তৈরি করছে। যেমন, পুরুষদের জন্য ম্যাচিং জহর কোট। ছোটদের জন্য ধুতি-কুর্তা। আবার মহিলাদের জন্য ব্লাউজ।’
পুজোর খাওয়াদাওয়া’তেও পিছিয়ে নেই ব্রিটেনবাসী বাঙালিরা। যার ইঙ্গিত মিলল ‘ওহ! ক্যালকাটা’র অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যে। ৭ অক্টোবর লন্ডনে তাঁদের প্রথম রেস্তোরাঁ খুলেছেন অঞ্জন। নাম ‘চৌরঙ্গি’। এবারের উৎসবের দিনগুলির জন্য তিনি কলকাতা থেকে তিনজন শেফ নিয়ে এসেছেন। অঞ্জন বলেন, ‘পুজোয় ‘‘বেস্ট অব চৌরঙ্গি’’ নামে একটি সেট মেনু চলবে। তাতে আমাদের বিখ্যাত খাবারগুলি যেমন কাঁকড়া-চিংড়ি ভাপা, চিংড়ির কাটলেট, কসা মাংস ও লুচি, চিংড়ির মালাইকারি, নলেন গুড়ের সন্দেশ, কুলফি ইত্যাদি থাকবে।’
রেডিং শহরে নতুন বাঙালি রেস্তোরাঁ ‘আড্ডা হাট’-এর প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের শেফ সৌরভ এবছর ভেটকি পাতুরি, তোপসে ফ্রাই, ফিশ ফ্রাই, মাটন চপ আর কলকাতার আরসালান স্টাইলের বিরিয়ানি তৈরির পরিকল্পনা করেছেন।’ প্রসেনজিতের নিজের পাড়ার পুজো এবার নবম বছরে পা দিল। জানালেন, পুজোর জন্য ‘আড্ডা হাট-এর কিছু সেট মেনু রয়েছে এবার। এবছর ব্রিটেনে সব মিলিয়ে ৪০টিরও বেশি দুর্গাপুজো হবে। যার মধ্যে রয়েছে জরোস্ট্রিয়ান সেন্টারে বিবার (বিলেতে বাঙালি) আয়োজিত একটি মেগা দুর্গোৎসব। বাড়ির কাছাকাছি দুর্গাপুজোর খবর নিতে হলে ইন্ডিয়ান বেঙ্গলিজ ইন ইউকে’র তৈরি একটি বিস্তৃত তালিকা আছে অনলাইনে।