কোন ধরণের সাবান ব্যবহার করা উচিৎ করোনা ঠেকাতে
শুধু করোনা নয়, যে কোনো ধরনের ভাইরাস – ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আটকাতে সাবানের কোন বিকল্প নেই। সাবানের অণুগুলো দেখতে অনেকটা পেরেকের মত। যার মাথার দিকটা হাইড্রোফিলিক বা জলাকর্ষী আর লেজের মতো বাকি অংশ ওলেওফিলিক বা তৈলাকর্ষী। এই তৈলাকর্ষী হওয়ার ফলে লেজের মত অংশটির ভাইরাসের লিপিড আস্তরণের প্রতি একটা আসক্তি থাকে।
এই লিপিড অণুগুলোর পারস্পরিক বন্ধন খুব দৃঢ় নয়। তাই সাবানের লেজের মত তৈলাকর্ষী অংশটি শাবলের ফলার মত ভাইরাসের বাইরের আবরণটিকে ভেঙে দেয় এবং জিনের উপাদানগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ভাইরাসের এই নিষ্ক্রিয় অংশগুলো জলে দ্রবীভূত হয়ে বেরিয়ে যায় । এজন্য সময় লাগে কুড়ি সেকেন্ডের মত।
সাবান একটি রাসায়নিক পদার্থ, ফ্যাটি আ্যসিডের লবণ। সোডিয়াম সল্ট অফ স্টিয়ারিক আ্যসিড অর্থাৎ স্টিয়ারিক আ্যসিডের সোডিয়াম লবণ। সরকারি নির্দেশ আছে এই লবণের পরিমাণ যে কোন সাবানে শতকরা ৭৬ ভাগ হতে হবে। দামে সস্তা বলে সাবানে পশুর চর্বি বা আ্যনিম্যাল ফ্যাট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাবানের কাজ দেহত্বক পরিষ্কার করা।
কথায় কথায় জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করলে দেহত্বকের ক্ষতি হয়। আমাদের দেহত্বকে অসংখ্য আণুবীক্ষণিক জীবাণু রয়েছে দেহের পক্ষে যারা অতি প্রয়োজনীয়। জীবাণুনাশক সাবানের ঠেলায় তারা মারা পড়লে দেহত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে চর্মরোগ দেখা দেবে অর্থাৎ হিতে-বিপরীত। জীবাণুনাশক সাবান তখনই ব্যবহারের প্রশ্ন আসবে যখন দেহত্বকের জন্য তার প্রয়োজন হবে ।
যেকোনো জীবাণুনাশক সাবানের দাম বাজারের অন্যান্য যেকোনো সাবানের থেকে অনেক বেশী। কিন্তু সত্যি তাদের জীবাণুনাশক ক্ষমতা কতটা? নিম সাবান বা চন্দন সাবানের শুধু নিম বা চন্দনের গন্ধটুকুই পাওয়া যায়। একটা সাবানের যে সামান্য পরিমাণ নিম বা চন্দন থাকে তা দিয়ে জীবাণু নাশ হয় না। কার্বলিক সোপ সম্বন্ধেও একই কথা। জীবাণু নাশ করতে গেলে একটা সাবানে যে পরিমাণ কার্বলিক অ্যাসিড মেশাতে হবে, তাতে চামড়া পুড়ে যাবে।
শীতকালে আমরা গ্লিসারিন সাবান মাখি। গ্লিসারিন দেহ ত্বককে মসৃণ করে, জলীয়বাষ্প ধরে রেখে দেহত্বকের ফাটা রোধ করে। কিন্তু একটা সাবানের গ্লিসারিন বা ল্যানোলিন জাতীয় পদার্থ যদি শতকরা দুই ভাগের বেশী হয় তবে সাবান এর কার্যকারিতা অর্থাৎ ময়লা পরিষ্কার করার ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যাবে।
আবার মাত্র দুই ভাগ গ্লিসারিন বা ল্যানোলিন আর দেহত্বকের কতটা উপকার করতে পারে? কাজেই এরচেয়ে ভালো যে কোন সাধারণ সাবান দিয়ে গা পরিষ্কার করার পর গায়ে গ্লিসারিন লাগানো, এতে খরচও অনেক কম পড়ে।
কাজেই আপনি ঠিক করুন বিজ্ঞাপনের ধন্দে পড়ে গ্যাটের কড়ি বেশী খরচ করে জীবাণুনাশক সাবান মাখবেন, না এমনি সাবান? শুধু করোনা নয়, যেকোনো রোগ জীবাণু তাড়াতে সাবানের কোনো বিকল্প নেই। সাবানটায় যেন প্রচুর ফেনা হয়, সেটা খেয়াল রাখবেন। কোন কোম্পানি খেয়াল রাখা দরকার নেই।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন স্যানিটাইজারের চেয়ে সাধারণ সাবান করোনার কোভিড ১৯ নিধনে অনেক বেশী কার্যকরী।