এবার পর্যটক নিয়ে গঙ্গার বুকে ঘুরবে প্যাডেল স্টিমার
পর্যটক নিয়ে গঙ্গার বুকে ঘুরবে প্যাডেল স্টিমার। পর্যটনে নয়া দিশা দেখাবে ৭৫ বছর আগে ইংল্যান্ডে তৈরি এই জলযান। নাম ‘ভোপাল’। এই স্টিমারের সংস্কার কাজ চলছে জোরকদমে। আগামী বছরের গোড়ায় গঙ্গায় হেরিটেজ ট্যুরে এই স্টিমারকে ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষ। কয়েক বছর আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ হুগলি নদীতে রাতে হেরিটেজ ট্যুর চালু করেছিল। যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। করোনা আবহে গত বছর থেকে এই ট্যুর বন্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা ফের নদীবক্ষে ওই ট্যুর চালু করার পরিকল্পনা করছে। তখন নবরূপে সেজে ওঠা এই প্যাডেল স্টিমারটি ব্যবহার করা হতে পারে। দেশের কোথাও এত পুরনো জলযান ব্যবহার করা হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশে একটি প্যাডেল স্টিমার রয়েছে। সেটিকে হেরিটেজ ট্যুরেই মূলত ব্যবহার করা হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের হেরিটেজ সংক্রান্ত পরামর্শদাতা গৌতম চক্রবর্তী জানিয়েছেন, হাওড়ার একটি শিপ ইয়ার্ডে বর্তমানে রয়েছে প্যাডেল স্টিমার ‘ভোপাল’। সেখানেই চলছে সংস্কারের কাজ। পুরনো ঐতিহ্য বজায় রেখেই আধুনিকীকরণ হচ্ছে স্টিমারটির। থাকবে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। স্টিমারের দু’দিকে বড় চাকার মতো দেখতে দু’টি প্যাডেল থাকবে। স্টিমারে রয়েছে দু’টি ইঞ্জিন। সেগুলিকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। যাতে জোয়ারের সময় স্রোতের বিপরীতে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে। শুধু পর্যটন নয়, এই জলযানে কনফারেন্সের যাবতীয় সুবিধাও রাখা হবে।
বন্দর সূত্রে খবর, একসময় কলকাতা থেকে জলপথে অসম পর্যন্ত যাওয়া যেত। স্বাধীনতার আগে অবিভক্ত বাংলা হয়ে অসম যেত পণ্য ও যাত্রীবাহী স্টিমার। সেই সময় ইংল্যান্ড থেকে আনা হয়েছিল ‘ভোপাল’কে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অন্য কোনও লঞ্চকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজেই মূলত ব্যবহার করা হতো ‘ভোপাল’কে। দেশভাগের পর এই জলপথ আর ব্যবহার করেনি ভারত সরকার। যে সব স্টিমার এই জলপথ ধরে যেত, সেগুলি কালের নিয়মে হারিয়ে যায়। শুধু প্যাডেল স্টিমার ‘ভোপাল’ পড়ে ছিল খিদিরপুর ডকের এককোণে। বন্দর সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের কাজে যুক্ত একটি সংস্থা শিক্ষার্থীদের কাজ শেখানোর জন্য এটি ব্যবহার করত। বছর দুয়েক আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ এটিকে সংস্কার করে ফের জলে নামানোর পরিকল্পনা করে। একটি বেসরকারি সংস্থা নিজেদের খরচে সংস্কার করে এটি চালানোর আর্জি জানায়। চুক্তি হয় বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ওই চুক্তিতেই রয়েছে, মাসের কয়েকটি দিন এই স্টিমার নিজেদের কাজে ব্যবহার করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রথমে খিদিরপুর ডকেই এটি সংস্কারের কাজ চলছিল। পরে হাওড়ার এক শিপ ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় ‘ভোপাল’কে। বন্দর সূত্রের খবর, করোনার কারণে সংস্কারের কাজ কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়লেও এখন দ্রুতগতিতে চলছে। আশা করা যায়, আগামী বছরের গোড়ায় পর্যটনের মুকুটে নতুন পালক যোগ করবে এই স্টিমার। এই স্টিমারেরই সংস্কার চলছে।