বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

আয়লা-পথে উম্পুন এলে শিয়রে দুর্যোগ

May 17, 2020 | 3 min read

ঘূর্ণিঝড়ের স্বল্প-বাঁকেই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বাংলা। ক্রমেই ঘনাচ্ছে তিন দশক পেরিয়ে পর পর দু’বছর ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী হওয়ার আশঙ্কা।

‘উম্পুন’ কোন তটে আছড়ে পড়বে, এখনও তা নিখুঁত ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে সম্ভাব্য গতিপথে পড়ে যেতে পারে বাংলার বিস্তীর্ণ তল্লাট। শনিবার মৌসম ভবনের পর্যবেক্ষণে প্রতিফলিত হয়েছে দুর্যোগের এই আভাসই। কতকটা ঘূর্ণিঝড় ‘আয়লা’র মতোই উপকূল থেকে রাজ্যের প্রায় মাঝ বরাবর উত্তরে সরার ইঙ্গিত দিচ্ছে ‘উম্পুন’। তাই বুধবার দক্ষিণবঙ্গে দুর্যোগের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গেও।

আয়লার ক্ষেত্রে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১২ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে শক্তি অনেকটাই বেশি, উপকূলের কাছে দমকা বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০-১৮০ কিলোমিটারেও পৌঁছতে পারে। তবে হাতে এখনও চার দিন। এর মধ্যে ওডিশা বা বাংলাদেশের দিকে ঘূর্ণিঝড় বাঁক নিলে এ যাত্রায় বেঁচে যেতে পারে বাংলা। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এখনও নিখুঁত করে বলার জায়গায় আমরা পৌঁছইনি। ০.০০১ ডিগ্রি বাঁক নিলেই ২৫০-৩০০ কিলোমিটারের হেরফের হয়ে যায়। তাই বাঁক নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।’

অর্থাৎ, বাঁকেই লুকিয়ে বাংলার বরাত। কারণ, এই ঘূর্ণিঝড়টি কয়েক বছর আগের পিলিন বা হুদহুদের মতো সরলরেখায় এগিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়বে না। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপ শনিবার তিন দফায় শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। উম্পুনের অবস্থান দিঘা থেকে ১২০০ কিলোমিটার দূরে। আজ, রবিবার অন্ধ্রপ্রদেশ বা ওডিশা উপকূলের দিকে এগোনোর কথা তার। এর পরে উত্তর-উত্তরপূর্ব মুখী বাঁক নেওয়ার সম্ভাবনা। আপাতত মৌসম ভবনের পর্যবেক্ষণ, অভিমুখ উত্তর-পূর্ব কম, তুলনায় উত্তর-মুখী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। স্বল্প-বাঁকের এই প্রবণতাই বাংলার জন্য দুশ্চিন্তার, মনে করছেন আবহবিদরা।

গত বছর ৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়েছিল সুন্দরবনে। তখনও সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া গিয়েছিল একেবারে শেষবেলায়। তার আগে সাগর থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়া পর্যন্ত সুদীর্ঘ উপকূলকে সতর্ক করেছিলেন আবহবিদরা। ঘূর্ণিঝড় কোন পথে এগোবে, কতটা শক্তি বাড়াবে, তা অনেকগুলি শর্তের উপর নির্ভর করে। আপাতত শক্তিবৃদ্ধির বেশিরভাগ শর্তই অনুকূল।

তবে বাঁক ছাড়াও কয়েকটি বিষয় বাংলার পক্ষে যায় কি না, সেদিকে নজর রাখছেন আবহবিদরা। যেমন, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে জলতলের তাপমাত্রা রয়েছে ৩০-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের ইঞ্জিন ভরপুর জ্বালানি পাচ্ছে। কিন্তু বাংলা লাগোয়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে জলের তাপমাত্রা কম। ফলে স্থলভাগের কাছে পৌঁছে শক্তি খোয়াতে পারে উম্পুন। তার উপর মে মাস হওয়ায় স্থলভাগের কাছে পৌঁছে উত্তর ভারত থেকে গরম, শুকনো হাওয়া টানবে উম্পুন। যা ঘূর্ণিঝড়ের কাঠামোর পক্ষে একেবারেই সহায়ক নয়। এক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যা পূর্বাভাস, সমুদ্রের লম্বা পথে আরও তিন দফায় শক্তি বাড়াবে ঘূর্ণিঝড়। স্থলভাগে ঢোকার আগে কিছুটা শক্তি কমতে পারে। তবুও সে সময় অতি তীব্র পর্যায়ে থাকতে পারে, ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ পৌঁছতে পারে ঘণ্টায় ১৭০-১৮০ কিলোমিটারে। বর্তমান পর্যবেক্ষণ সত্যি হলে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ পেরিয়েও ঘূর্ণিঝড় তকমা অটুট থাকবে। গভীর নিম্নচাপ রূপে পৌঁছে যেতে পারে তরাই-ডুয়ার্সের গোড়াতেও। তাই দক্ষিণবঙ্গে যেমন বুধবার বিক্ষিপ্ত ভাবে অতি ভারী বর্ষণের (উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তারও বেশি) পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তেমন ভারী বৃষ্টির আভাস দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায়। ঠিক এমনই হয়েছিল আয়লার ক্ষেত্রে। আবহবিদদের অভিজ্ঞতা, এ ভাবে উপকূল থেকে উত্তরে সরার প্রবণতা তুলনায় কম দেখা যায়। বরং, বাংলা-ওডিশা পেরিয়ে উত্তর বা মধ্য ভারতে সরার ঝোঁকই বেশি থাকে ঘূর্ণিঝড়ের।

উম্পুনের হাত ধরে অন্য একটি প্রবণতাও আলোচনায়। পর পর দু’বছর ঘূর্ণিঝড় বাংলা শেষবার দেখেছিল ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালে। অর্থাৎ, তিন দশক পর এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চলেছে রাজ্য। বুলবুলের ক্ষত পুরোপুরি সারিয়ে ওঠার আগেই দরজায় কড়া নাড়ছে আরও একটি ঝড়। অথচ, বাংলায় বুলবুল এসেছিল আয়লার ঠিক দশ বছর পরে। তার আগে ঘূর্ণিঝড়টি এসেছিল ২০০২ সালে। অনেকগুলি বছরের বিরতি দিয়ে। পর পর দু’বছর পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আসার ঘটনাও খুব কম। রাজ্যের ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় প্রবণ সময়কাল ধরা হয় ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সালকে। প্রতি বছরই একটি করে ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপ্টা সইতে হয়েছিল রাজ্যকে। এর মধ্যে শেষ বার একই বছরে দু’টি। পর পর দু’বছর আবার ঘূর্ণিঝড় দেখা যায় ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে। বুলবুল-উম্পুন সেই স্মৃতিই উস্কে দিতে চলেছে!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#cyclone umpun, #West Bengal

আরো দেখুন