লকডাউন পরিস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কট তবু কাটছে না
লকডাউন পরিস্থিতির জেরে বিপর্যস্ত রাজ্যে শিক্ষকদের একাংশ। বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের অনেকে উদ্ভূত সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিনামূল্যে রেশন পাওয়ার দাবিও তুলেছেন। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যুক্ত পার্টটাইম শিক্ষক-প্রশিক্ষকরা এতদিন বছরে এপ্রিল থেকে জুন মাসের ভাতা পেতেন না। যেহেতু এই তিন মাস বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্লাস হয় না। তবে নজিরবিহীন সঙ্কটে তাঁদের দিকে কিছুটা হলেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। করোনা সংক্রমণ এড়াতে ও লকডাউনে ক্লাসরুম এখন বন্ধ থাকলেও কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর হস্তক্ষেপে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষক-প্রশিক্ষকরা ক্লাস পিছু কিছু ভাতা পাচ্ছেন।
বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্রে পার্টটাইম শিক্ষক ও প্রশিক্ষকরা পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি কম্পিউটার, অটোমোবাইল, ফোটোগ্রাফি, ভিডিয়োগ্রাফি, আমিন সার্ভে, জরি ওয়ার্ক, হাউস ওয়্যারিং অ্যান্ড মোটর ওয়াইনডিং, টেলিফোন ও মোবাইল রিপেয়ারিং, ইনকাম ট্যাক্স ফাইলিং ও টেলারিং-সহ ৪৫টি বিভিন্ন কাজের মাধ্যমেও সামান্য উপার্জন করতেন। দু’টি উৎস থেকে মোট যা আয় হতো, তাতে যা হোক করে তাঁদের সংসার চলে যেত। কিন্তু লকডাউনে বাইরের কাজ একেবারে বন্ধ। ফলে, সেই উৎস থেকে উপার্জন এক রকম নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের উদ্যোগে ওই শিক্ষক-প্রশিক্ষকরা অনলাইনে একটি স্কুলে পড়িয়ে ২৬৪০ টাকা ও কেউ কেউ দু’টি স্কুলে পড়ানোর সুযোগ পেলে ৫২৮০ টাকা হাতে পাচ্ছেন।
হাওড়ার গঙ্গাধরপুর শিক্ষাকেন্দ্রের পার্থপ্রতিম দাস বলেন, ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের পাশাপাশি সকাল-বিকাল আয়কর ফাইল-সহ ট্যাক্সের নানা কাজ করতাম। হাতে বাড়তি তিন-চার হাজার টাকা আসত। এখন সে সব বন্ধ। শুধু ক্লাস পিছু টাকা হাতে পাচ্ছি। এই অবস্থায় মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার সামাল দেওয়া খুবই কষ্টের।’ হাওড়ারই আর একটি কেন্দ্রের শিক্ষক অলিপ ধাড়ার কথায়, ‘জরি ওয়ার্ক অ্যান্ড কাঁথা এমব্রয়ডারি পড়ানোর পাশাপাশি বাড়িতে খুব কষ্ট হলেও জরির কাজ করতাম। মাসে আড়াই হাজার অতিরিক্ত আয় হত। কিন্তু লকডাউনে সেই কাজ বন্ধ। এখন ওস্তাগররা না-আসায় বাড়তি কোনও আয় নেই।’
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর বেলিয়াড়া হাইস্কুলে অটোমোবাইল ট্রেডে টু-থ্রি হুইলার মেকানিক্স পড়ান পরেশ কর্মকার। তিনি বলেন, ‘স্কুলের পড়ুয়াদের হাতকলমে শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য গ্যারাজ খুলেছিলাম। কিন্তু এখন না-শিখতে আসছে ছাত্ররা, না-আসছেন কোনও গাড়ি চালক।’ ওই স্কুলেরই টেলারিংয়ের প্রশিক্ষক শেখ ফারুখের কথায়, ‘ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি দোকান খুলছি। কিন্তু কোনও কাজ নেই।’ তবে তাঁরা বলছেন, ‘গত এক-দেড় যুগ ধরে বছরে এপ্রিল, মে এবং জুনে ক্লাস না-থাকায় কোনও টাকা পেতাম না। এ বার রাজ্য সরকার পাশে থাকায় সেটা মিলছে। তাই, কোনওক্রমে রক্ষা!’
বৃত্তিমূলক শিক্ষার ১২ হাজার শিক্ষক ও প্রশিক্ষকরা বাঁচার তাগিদে একগুচ্ছ দাবি তুলেছেন। ছ’টি সংগঠনের বৃত্তিমূলক যৌথমঞ্চ কারিগরি শিক্ষামন্ত্রীকে অনলাইন দাবি সনদ পেশ করে সরকারি আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছে। পূর্ণেন্দু অবশ্য বলেন, ‘আমি এ রকম কোনও স্মারকলিপি পাইনি। তাই, এই ব্যাপারে আগাম কিছু বলা সম্ভবও নয়। ওঁরা সরকারি সংস্থার মাধ্যমে নিযুক্ত হননি। বেসরকারি এজেন্সি ওঁদের নিয়োগ করেছে।’