শিলিগুড়িতে বিরোধীশূন্য বাম বোর্ড, সঙ্কটে সৌজন্য মমতার
শিলিগুড়ি পুরসভায় প্রশাসক বোর্ড গঠন নিয়ে সঙ্কটে সৌজন্য দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে বিরোধীশূন্য বোর্ড গঠন করতে চলেছেন অশোক ভট্টাচার্য। ১২ জনের নয়, প্রশাসকমণ্ডলী হবে সাতজনের। কারণ অশোকবাবু তাঁর বোর্ডে বিরোধী দলের কোনও প্রতিনিধিকে রাখতে চাননি। সেই দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। শিলিগুড়ি পুরসভার বিদায়ী মেয়র ও ডেপুটি মেয়র সহ মেয়র পরিষদ সদস্যরা এই বোর্ডে থাকছেন। কাল, সোমবার নয়া প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন অশোকবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা। অশোকবাবুকে বিরোধীশূন্য বোর্ড গড়তে দেওয়ার ব্যাপারে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া, আমি ভেবেছিলাম, সবাইকে নিয়ে চলব। সেটাই ভালো। এখানেও আমি তাই করেছি। কিন্তু, উনি সেটা চাইলেন না। আমি আর কী করব?
আজ, রবিবার বামফ্রন্ট পরিচালিত শিলিগুড়ি পুরসভার বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রশাসক বোর্ড গঠন নিয়ে জোর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। এদিন দ্বিতীয় নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত বিতর্কে জল ঢেলে দিয়েছে মমতার সরকার। পুরদপ্তরের জারি করা ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ আছে, প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন বিদায়ী মেয়র সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য। এছাড়া বিদায়ী ডেপুটি মেয়র আরএসপির রামভজন মাহাত, বিদায়ী মেয়র পরিষদ সদস্য কমল আগরওয়াল (ট্রেড লাইসেন্স), শঙ্কর ঘোষ (স্বাস্থ্য), শরদিন্দু চক্রবর্তী (জল), মুন্সি নুরুল ইসলাম(পূর্ত) এবং মুকুল সেনগুপ্তকে (পরিবেশ) বোর্ডের সদস্য মনোনীত করা হয়েছে।
শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ড গঠন নিয়ে শুক্রবার রাজ্য সরকার প্রথম নির্দেশিকা জারি করে। তাতে বিদায়ী মেয়র, ডেপুটি মেয়র, মেয়র পরিষদ সদস্যরা ছাড়াও বিদায়ী বিরোধী দলনেতা সহ তৃণমূলের পাঁচজন কাউন্সিলার ছিলেন। সেই প্যানেল নিয়ে আপত্তি তোলেন অশোকবাবু। তিনি প্রস্তাবিত প্রশাসক বোর্ডে তৃণমূল কাউন্সিলারদের রাখতে চাননি। অশোকবাবু সিদ্ধান্ত বদলের দাবি জানিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার সঙ্কটকালে তাঁর সেই দাবি মেনে নেয়।
অশোকবাবু এদিন বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে কলকাতা সহ রাজ্যের অন্যান্য পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা শিলিগুড়িতে করারও দাবি জানিয়েছিলাম। জনসমক্ষে তা তুলে ধরে ছিলাম। অল্প সময়ের মধ্যে রাজ্য সরকার ভুল বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত বদল করেছে। এটাতো আমাদের একরকম জয়। এতে আমরা সন্তুষ্ট। পুরমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। শীঘ্রই আমরা প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্ব নেব।
অশোকবাবু যাই দাবি করুন না কেন, তাঁর বোর্ডে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় অশোকবাবুর বিরুদ্ধে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকে বলছেন, ক্ষমতার মোহ অশোকবাবু ত্যাগ করতে পারছিলেন না। তাই বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। পাশাপাশি প্রশাসক বোর্ড প্রত্যাখ্যানের কথা ঘোষণা করলেও কোনও চিঠি তিনি রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাননি। এসব থেকেই স্পষ্ট, তিনি ক্ষমতায় থাকতে কতটা পছন্দ করেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, অশোকবাবুদের প্রশাসক বোর্ডে বসিয়ে সিপিএম ও কংগ্রেস জোটে ফাটল ধরাতে চাইতে তৃণমূল।