পিকনিকের আমেজে কলকাতার কিছু স্পটের খোঁজ

শীতকাল মানেই লেপের উষ্ণ আদর, নলেন গুড়ের মিষ্টি আর অবশ্যই পিকনিক। শেষটি ছাড়া কিন্তু বাঙালির শীতকাল অসম্পূর্ণ।

January 19, 2020 | 4 min read
Published by: Drishti Bhongi

শীতকাল মানেই লেপের উষ্ণ আদর, নলেন গুড়ের মিষ্টি আর অবশ্যই পিকনিক। শেষটি ছাড়া কিন্তু বাঙালির শীতকাল অসম্পূর্ণ। উত্তুরে হাওয়া গায়ে লাগতেই শুরু হয় পিকনিকের পরিকল্পনা। 

শীতের মরসুমে দল বেঁধে পিকনিকে যাননি, এ রকম মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! প্রকৃতিবিলাস, নির্ভেজাল আড্ডা তো আছেই, সঙ্গে কব্জি ডুবিয়ে রসনাতৃপ্তি— এই তো পিকনিকের প্রাপ্তি। একটা দিন ডায়েট ভুলে কষা মাংস বা ফুলকো লুচিতে নিজেকে নিমজ্জিত করাই যায়। 

বাঙালির এই পিকনিক-প্রেমকে উসকে দিতেই শহরের কাছে-দূরে ক’টি জমজমাট পিকনিক স্পটের সন্ধান রইল।

ছবি সৌজন্যেঃ telegraphindia

টাটকা মাছ, আনাজের খোঁজে

নাগরিক কোলাহলের এত কাছে খোলামেলা এমন একটি জায়গা যে আছে, তা বাইরে থেকে বোঝাই মুশকিল। ইএম বাইপাসে চিংড়িঘাটা বাসস্টপ থেকে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই নাগাল মিলবে ৪ নম্বর ভেড়ি। ফিশিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড পরিচালিত এই পিকনিক স্পটটি রয়েছে প্রায় ১১১ একর জায়গা জুড়ে। 

সবুজের ছায়া মাখানো মেঠো পথ, পাশেই নীল জলের বিরাট ভেড়ি – ইচ্ছে করলে সেই জলে নৌকা নিয়ে ভাসাও যায়। আবার রান্নার পাশাপাশি খেলার শখ হলে, রয়েছে উন্মুক্ত মাঠ। সব মিলিয়ে সারা দিন কাটানোর জন্য জায়গাটি দারুণ।

পিকনিকের জন্য এখানে সাতটি জায়গা রয়েছে। এক একটি স্পটে ৫০ জনের বেশি প্রবেশের অনুমতি নেই। তবে লোকসংখ্যা বেশি হলে একাধিক স্পট একত্রে নেওয়ার সুযোগও আছে। ভাড়া স্পট প্রতি ৩,০০০ টাকা। রান্নার সরঞ্জাম, ঠাকুর বা কেটারারের ব্যবস্থাও এখানেই রয়েছে। পিকনিকের ফাঁকে জিরিয়ে নিতে চাইলে রয়েছে রেস্ট রুম। ফেরার পথে থলে ভর্তি করতে পারেন টাটকা মাছ, আনাজপাতিতে।

ছবি সৌজন্যেঃ Wikipedia

রঙিন মাছ আর নৌকাবিলাস

কলকাতার বাইপাসে রুবি হাসপাতাল লাগোয়া রাস্তা ধরে মিনিট দশেক গেলেই রয়েছে আরও একটি মনোরম পিকনিক স্পট— পূর্ব কলকাতা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। প্রায় ৩৬০ বিঘা জুড়ে জলাশয়। সেখানে মিষ্টি জলে নানা মাছের জলকেলি। জলাশয়ের উল্টো দিকে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। পিকনিকের জন্য ১৭টি স্পট আছে। ভাড়া ৩,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকার মধ্যে। আর খাওয়াদাওয়ার পরে ক্লান্ত হলে দু’দণ্ড জিরিয়ে নিতে পারেন কমিউনিটি হলে।

ছবি সৌজন্যেঃ bawalifarmhouse

কলাপাতায় ভূরিভোজ থেকে টেবল টেনিস

দক্ষিণ কলকাতায় তারাতলা থেকে গাড়িতে যেতে হবে ঘণ্টাখানেক। তাতেই পৌঁছে যাবেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাওয়ালি ফার্ম হাউসে। আসা যায় বজবজ স্টেশন হয়েও। সেখান থেকে ফার্ম হাউসের দূরত্ব  ন’কিলোমিটার। দলবেঁধে পিকনিক করার আদর্শ জায়গা। জায়গাটির চারপাশ জুড়ে রঙিন ফুল এবং সবুজ গাছগাছালির সমাহার। এরই মাঝেমাঝে বিশ্রামের জন্য মাটির কুটির। আছে বাচ্চাদের খেলার আলাদা জায়গাও। 

চেয়ার-টেবিল, ছাতা থেকে মিউজ়িক সিস্টেম সবই ভাড়ায় পেয়ে যাবেন। কমপক্ষে ১০জনের জন্য পিকনিক স্পটের ভাড়া ২৯৫০ টাকা (একটি রুম-সহ)। তার পরে দলে সদস্য সংখ্যা বাড়লে জনপ্রতি ১০০ টাকা। কেটারিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। কলাপাতায় ও মাটির ভাঁড়ে খাবার ও জল পরিবেশনের রীতি আপনাকে নস্ট্যালজিক করবেই।

মাছ ভাজা খেতে খেতে মৃদুমন্দ বাতাসে বিশ্রাম নিতে পারেন, আবার টেবল টেনিস খেলাতেও যোগ দিতে পারেন। আছে পাশের পুকুরে মাছ ধরার সুযোগও।

ছবি সৌজন্যেঃ Surajit Saha

মরসুমি ফুলের বাগানের মাঝে

বাগানবাড়ি নামের মধ্যেই কেমন একটা ভাল লাগা জড়িয়ে থাকে। মধ্যমগ্রামের বাদু রোড ধরে মহেশ্বরপুর কালী মন্দিরের উল্টো দিকেই সুরেন্দ্রভবন। পরিবারের পদবি আইচ, সেখান থেকেই লোকমুখে আইচবাবুর বাগানবাড়ি। প্রায় আট বিঘা জমি জুড়ে সেই বাড়িেত রয়েছে নানা গাছ, মরসুমি ফুলের বাগান। পার হলেই পুকুর। সেখানে ব্রিজ় পেরিয়ে খাওয়ার জায়গা। বাচ্চাদের খেলার মাঠ, দু’টি রেস্টরুম, ডাইনিং এরিয়া সবই চড়ুইভাতির সঙ্গে পেয়ে যাবেন। সব মিলিয়ে সকলের সঙ্গে চুটিয়ে আনন্দ করার যোগ্য আয়োজন। ভাড়া ৭,৩০০ টাকা। তবে এককালীন একটি দলই সুযোগ পান পিকনিক করার।

ছবি সৌজন্যেঃ holidayhotspot

দারুচিনির গাছ কিংবা ট্রিহাউস

কলকাতার খুব কাছে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে রামমন্দির গার্ডেন। অর্কিড, পাম, মরসুমি ফুলের বাগান তো আছেই, সেই সঙ্গে কাজুবাদাম, কমলালেবু, দারুচিনির মতো গাছও রয়েছে। আর আমগাছের উপরে রয়েছে ট্রি টপ মাচা। সেখানে বসে দিব্যি খোলা হাওয়ায় কিছুটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। রান্না করার জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা, কাছেই রয়েছে বাজার। শুধু চলে আসার অপেক্ষা। সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনে ৮,৫০০ টাকা ভাড়া। অন্য দিন ৬,৫০০ টাকা।

ছবি সৌজন্যেঃ tintinbox

রাজার বাগান

বর্ধমান রাজার শিকারভূমি ছিল ভালকিমাচান, তার স্মৃতি ধরে রেখেছে ওয়াচটাওয়ার। তবে শুধু ঐতিহ্যই নয়, মনোরম প্রকৃতির টানেও অনেকে ভিড় জমান এখানে। শাল, সেগুন, পিয়াল ছাওয়া বিস্তৃত অরণ্যভূমি। কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে গলসি মোড় হয়ে তিন ঘণ্টার ড্রাইভ – পৌঁছে যাবেন ভালকিমাচানে। স্পটের এন্ট্রি ফি ১০০ টাকা (গাড়ি প্রতি) ও ৫০০ টাকা (বাস প্রতি)। ১০০টিরও বেশি স্পট আছে এখানে। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা নিজেরাই করতে পারেন। তবে থার্মোকল ও প্লাস্টিক এখানে বর্জিত। কাঠের উনুন নয়, স্টোভে রান্নার নির্দেশ রয়েছে। এছাড়াও গেস্ট হাউসে ক্যাটারিং এবং খাওয়াদাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। ফেরার পথে গাড়ির হেডলাইট নিভিয়ে রাজা-রানির রোম্যান্টিক চাঁদনি স্পট না দেখে ফিরবেন না!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen