সুন্দরবনের মধু নিয়ে পুনের সংস্থার বিরুদ্ধে স্বত্ব প্রাপ্তির লড়াইয়ে বাংলা
মধু, তুমি কার? সুন্দরবনের মধুর জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস বা জিআইয়ের জন্য আবেদন করেছিল পুনের একটি সংস্থা। বাংলার একেবারে নিজস্ব এই মধুর স্বত্ব নাকি তাদেরই! সেই দাবির স্বপক্ষে একগুছ ‘প্রমাণপত্র’ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা করেছিল তারা। এহেন দাবি রাজ্য সরকারের নজরে আসতেই বেজায় চটেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর। তারা জিআই কর্তৃপক্ষকে বিশদে জানিয়েছে, কোনওভাবেই সুন্দরবনের মধুর স্বত্ব বাইরের রাজ্যের কোনও সংস্থার হতে পারে না। এই বিষয়ে পাঠানো হয়েছে আইনজীবীর চিঠিও। পাশাপাশি দপ্তর নিজেই আবেদন করে বলেছে, যেহেতু রাজ্য সরকারের আওতায় থেকেই মউলিরা সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করে, তাই তার জিআই বা স্বত্ব দেওয়া হোক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরকেই। মধুর স্বত্ব নিয়ে দড়ি টানাটানি মনে করিয়ে দিচ্ছে রসগোল্লার জিআই প্রাপ্তিকে।
এরাজ্যে যে প্রাকৃতিক মধু পাওয়া যায়, তার সিংহভাগ আসে সুন্দরবন থেকে। স্বাদ ও রংয়ে তার জুড়ি মেলা ভার। তাই চাহিদাও বেশ ভালো। সেই মধুর জিআই তকমা পেলে ব্যবসা তথা রপ্তানিতে বড় সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। তাই সেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুনের একটি সংস্থা, জানাচ্ছেন তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের কর্তারা। কিন্তু তারা যেহেতু সরাসরি জিআই পেতে পারবে না, তাই রাতারাতি নতুন একটি সংস্থা তৈরি করা হয় সুন্দরবনের ঠিকানায়। তারাই আবার সুন্দরবনের মধুর জিআইয়ের জন্য আবেদন করার অনুমোদন দেয় পুনের ওই সংস্থাকে। কর্তারা বলছেন, এই সবই এরাজ্যের মধু ব্যবসাকে হাতিয়ে নেওয়ার সুচতুর ছক।
সুন্দরবনের মধুর জন্য ভিন রাজ্যের একটি সংস্থা জিআইয়ের জন্য আবেদন করার পরই এ নিয়ে সরব হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর। তারা চেন্নাইয়ে জিআই কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানায়, কোনওভাবেই ওই সংস্থা জিআই পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ, সুন্দরবনের বেশ কয়েকজন মধু সংগ্রহকারী রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রক ও রাজ্য বন দপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে তাঁরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। তাই জিআইয়ের তকমা বাইরের কোনও সংস্থা নিয়ে যেতে পারে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের আওতায় থাকা পেটেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারে তাঁরা ওই চিঠি লেখেন। ওই জিআই আবেদনের বিরোধিতার পর রাজ্য সরকার নিজেই সুন্দরবনের মধুর জিআই-এর জন্য আবেদন করে। তা করা হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির আওতায় থাকা পেটেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারে। এখানকার গবেষক মহুয়া হোমচৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের মধু বাংলার সম্পদ। তার স্বত্ব কিছুতেই পুনের কোনও সংস্থার হাতে যেতে পারে না। আমরা তাই নিজেরাই জিআইয়ের আবেদন করেছি। তাতেই ব্যবসায় প্রকৃত উপকার পাবেন মধু সংগ্রহকারীরা।
প্রসঙ্গত, বাংলার কোনও পণ্যের জন্য জিআইয়ের আবেদন করার ক্ষেত্রে নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ করে রাজ্য সরকারের এই পেটেন্ট ইনফরমেশন সেন্টার।
কোনও পণ্যের জিআই পাওয়ার অর্থ, সেটি সেই নির্দিষ্ট এলাকারই সম্পদ। এই স্বত্ব থাকলে ব্যবসায় সুবিধা পাওয়া যায়। রপ্তানিতেও গুরুত্ব বাড়ে। এর আগে জিআই নিয়ে প্রায় একই ধাঁচে টানাপোড়েন চলেছিল রসগোল্লা নিয়ে। বাংলার পাশাপাশি আবেদন করেছিল ওড়িশা। আইনি জটিলতা এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হয় বাংলার। জিআই তকমা পায় ‘বাংলার রসগোল্লা’। সুন্দরবনের মধুর স্বত্ব নিয়েও যাতে সব কিছুর ‘মধুরেণ সমাপয়েত’ হয়, এখন নজর সেদিকেই।