কলকাতার ১৪টি ওয়ার্ড করোনা মুক্ত হওয়ায় স্বস্তিতে প্রশাসন
গত বছর মে-জুন মাসের কথা ভাবলে এখনও শিহরিত হতে হয়। সেই সময় আমার ওয়ার্ডে দিনে গড়ে আট থেকে দশজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। প্রথম ঢেউ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছি। এখন অবশ্য সেই পরিস্থিতি নেই। গোটা ওয়ার্ডই করোনামুক্ত।’ কথা প্রসঙ্গে সেদিনের সেই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর ইলোরা সাহা। শুধু ২৪ নম্বর নয়, শহরের মোট ১৪টি ওয়ার্ড গত দু’সপ্তাহ ধরে করোনার গ্রাস থেকে দূরে রয়েছে। এক সময় মধ্য কলকাতার চৌরঙ্গিতে ৫২ নম্বর ওয়ার্ড ঘুম কেড়েছিল পুরকর্তাদের। একের পর এক আক্রান্তের খবর আসছিল ওই ওয়ার্ড থেকে। সেই ওয়ার্ডও আপাতত সংক্রমণমুক্ত।
পুরসভার তথ্য বলছে, শহরের ১৪টি ওয়ার্ডে গত ১৪ দিনে (১১-২৪ অক্টোবর) একজনও আক্রান্ত হননি। পুজোর পর যখন কলকাতায় দৈনিক আক্রান্তের গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী, তখন আশার আলো দেখাচ্ছে ২০, ২৪, ২৮, ৪১, ৪২, ৪৮, ৫২, ৭৭, ১৩৪, ১৩৬, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯ এবং ১৪০ নম্বর ওয়ার্ড। যা পুর স্বাস্থ্যকর্তাদের নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি দিচ্ছে।
কেন এই সাফল্য? কো-অর্ডিনেটরদের কথায়, টিকাকরণই সাফল্যের চাবিকাঠি। গতবার দেখা গিয়েছিল, যে সব এলাকায় বহুতল আবাসন রয়েছে, সেখানে সংক্রমণে রাশ টানতে সময় লেগেছে। বরং যেখানে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের বাস, সেখানে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এসেছে করোনা। ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের তালতলা, জানবাজার, মির্জা গালিব স্ট্রিটে মূলত থাকেন নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তরা। রয়েছে বস্তি এলাকা। স্থানীয় ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর সন্দীপন সাহা এব্যাপারে সতর্ক। তিনি বলেন, আজ হয়তো নেই, কিন্তু কাল যে কেউ আক্রান্ত হবেন না, তো বলব কী করে। গত বছর প্রথম ঢেউয়ের পর থেকেই বস্তি অঞ্চলে সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বেসামাল হলেও ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে হাতেগোনা কেস পাওয়া গিয়েছিল। এখন প্রায় ১০০ শতাংশ টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। হয়তো সে কারণেই গত কয়েক দিন কেউ আক্রান্ত হয়নি। প্রায় একই বক্তব্য ইলোরা সাহার মুখেও। তাঁর এলাকায় নতুন বাজার, পি কে ঠাকুর স্ট্রিট, বৈষ্ণব শেঠ স্ট্রিট, নিমতলা ঘাট স্ট্রিট থেকে একটা সময় অহরহ আক্রান্তের খবর আসত। এটি মূলত মার্কেট এলাকা। বাইরে থেকে অনেকেই আসেন। ইলোরাদেবী বলেন, এখানে মুটিয়া-মজদুর, পরিযায়ী শ্রমিকের আধিক্য রয়েছে। টিকাকরণের প্রথম দিন থেকেই আমি এই অংশের মানুষকে ধরে ধরে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি বাড়িতে একাধিকবার লোক পাঠিয়ে বোঝানো হয়েছে, কেন টিকা জরুরি। করোনার প্রথম ঢেউ আমাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। প্রতিদিনই আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। ওয়ার্ডভিত্তিক আক্রান্তর হিসেবে কোনও কোনও দিন এই ২৪ নম্বরই ছিল কলকাতার মধ্যে সর্বোচ্চ। এখন এই এলাকা করোনামুক্ত। খানিকটা নিশ্চিন্ত লাগছে।
অন্যদিকে, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, আহিরীটোলা, ক্যানাল ইস্ট রোড, গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজের মতো অঞ্চল থেকেও এই দু’সপ্তাহে কোনও আক্রান্তের খবর আসেনি।