ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পেতে চলেছে বিশ্বভারতী!
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা পেতে চলেছে বিশ্বভারতী! সোমবারই বিশ্বভারতীতে এসেছেন ICOMOS (ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস)-এর এক প্রতিনিধি দল। যাঁদের মতামতের উপরেই নির্ভর করছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় শান্তিনিকেতনের নাম ওঠা বা না ওঠা।
দেশের বহু সৌধ কিংবা বস্তুকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় মনোনয়ন দিলেও এখনও ব্রাত্য থেকে গিয়েছে কবিগুরুর বিশ্বভারতী। অথচ দেশের প্রথম নোবেলজয়ী গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের কর্মভূমি ‘শান্তিনিকেতন আশ্রম’-এর ঐতিহ্য কোনও অংশে কম নয়। দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ বিশ্বকবির এই আশ্রমকে চাক্ষুষ করতে আসেন। তবু এটা হেরিটেজ সাইটের তকমা না পাওয়ায় সকলেরই আক্ষেপ রয়েছে। এর কারণ নিয়ে রয়েছে বহু বিতর্কও।
তবে এবার সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে ফের একবার সুযোগ পেয়েছে বিশ্বভারতী। আর এই সুযোগকে কোনভাবে হাতছাড়া করতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে শান্তিনিকেতনবাসী।
জানা গিয়েছে, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা দেওয়ার জন্য সম্প্রতি ফের ইউনেস্কোর কাছে আবেদন জানিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদন খতিয়ে দেখতেই সোমবার দুপুরে ইউনেস্কোর সাত সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধিদল শান্তিনিকেতনে পা দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে এসেছেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের কয়েকজন আধিকারিকও। ইউনেস্কোর প্রতিনিধি দলের সামনে বিশ্বভারতীর স্থাপত্য, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি আদায়ে প্রাণপণ চেষ্টাও চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
ইউনেস্কোর এই প্রতিনিধি দলের বিশ্বভারতীতে আসার খবর অবশ্য আগেই এসেছিল। সেজন্য সেপ্টেম্বর মাস থেকেই শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যশালী গৃহ সংরক্ষণের কাজ শুরু করে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ। উপাসনা গৃহ সহ ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলির সংস্কার, ভেঙে পড়া ঘণ্টাতলার পুনর্নিমাণ, খোলা জায়গাগুলি রেলিং দিয়ে ঘিরে রাঙিয়ে তোলা ইত্যাদি নানান কাজে তোড়জোড় শুরু করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। স্থাপত্য, ভাস্কর্যগুলিরও সংস্কার শুরু হয়েছিল।
এককথায়, বিশ্বভারতীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও তার সংরক্ষণকে প্রতিনিধি দলের সামনে উপস্থাপিত করার লক্ষ্যেই গত কয়েক মাস মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখন দেখার এবার শান্তিনিকেতনের সিঁকে ছেড়ে কিনা!
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা ছাড়াও সেখানে পুরাতত্ত্ব বিভাগের কয়েকজন আধিকারিকও উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের ২৩টি ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, বিভিন্ন স্থাপত্য ও ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলি ঘুরে দেখেন। বিস্তারিত তথ্য নেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এরপর তাঁরা কী মতামত পোষণ করবেন, তার ভিত্তিতেই মিলবে শান্তিনিকেতন-প্রেমী মানুষের বহু প্রতীক্ষিত প্রশ্নের উত্তর, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় বিশ্বভারতীর নাম উঠবে কি না!