সেলাই মেশিন ও নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা
১৮৫০ সালেও সামাজিক অগ্রগতির বিষয়টি ছিল অবহেলিত। কয়েক বছর আগে আমেরিকান ক্যাম্পেইনার এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যানটন নারীদের ভোটাধিকার চেয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। বস্টনে একজন ব্যর্থ অভিনেতা নতুন কিছু আবিষ্কার করে নিজের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছিলেন। তিনি একটি ওয়ার্কশপের শোরুমে একটু জায়গাও ভাড়া করলেন কাঠের শিল্পকর্ম বানানোর মেশিন বিক্রীর জন্য।
যন্ত্রটি দারুণ হলেও এটি কিনতে উৎসাহিত ছিল না কেউই। ওয়ার্কশপের মালিক হতাশ এই উদ্ভাবককে অন্য একটি যন্ত্রের কথা বললেন – সেলাই মেশিন। কিন্তু এই মেশিনটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। একটা শার্ট সেলাইয়ের কাজেই লাগতো প্রায় ১৪ ঘণ্টা। তাই এই কাজে গতি বাড়ানোর জন্য দরকার ছিল উন্নত একটি যন্ত্রের।
সেই ব্যর্থ অভিনেতা তথা উদ্ভাবক ছিলেন অ্যাইজ্যাক মেরিট সিঙ্গার। সিঙ্গার ঠিক নারী অধিকারের সমর্থক ছিলেন না। তার জীবনীকার রুথ ব্রান্ডন বলছেন তিনি কেবল নারী আন্দোলনে বাড়তি কিছু যোগ করেছেন। তিনি সেলাই মেশিনের মডেল তৈরী করে সেটা বিক্রী শুরু করেন। এইরকম মডেল এটাই ছিল প্রথম। এতে একটি শার্ট সেলাই করতে এক ঘণ্টার বেশ সময় লাগছিল না।
সমস্যা ছিল অন্য। এই যন্ত্রের পেটেন্ট ছিল অন্য একজনের। ১৮৫০ সালের কথিত সেলাই মেশিন ‘যুদ্ধের’ সময় উদ্ভাবকরা বিক্রীর চেয়ে এসব প্যাটেন্ট করাতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত একজন আইনজীবী তাদের এক জায়গায় আনেন এবং বোঝাতে সক্ষম হন যে তাদের সব প্যাটেন্ট একসাথে করলেই একটি দারুণ মেশিন হতে পারে। তাহলে তারা এক যোগে কাজ করবেন না কেন। আর এভাবেই আইনি বাধামুক্ত হয়ে মার্কেটে আসে অ্যাইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের সেলাই মেশিন। খুব শীঘ্রই এই মেশিন বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে।
সিঙ্গার ও তার বিজনেস পার্টনার এডওয়ার্ড ক্লার্ক বেশী জোর দিয়েছিলেন মার্কেটিংয়ে। সেলাই মেশিন তখন ছিলো ব্যয়বহুল। একটি গড়পড়তা পরিবারের জন্য কয়েক মাসের আয়ের সমান। ক্লার্ক এসব পরিবারের জন্য ভিন্ন ধারণা নিয়ে আসেন। পরিবারগুলো মেশিন ভাড়া নেবে কিছু ডলারের বিনিময়ে এবং এভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে করতে মূল দামের সমান হয়ে গেলে তারা যন্ত্রটির মালিক হবে।
যন্ত্রটি কেনার সময়ই ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা দেখার জন্য তারা লোকজনকে উৎসাহিত করেন তারা। এরপরেও সমস্যা ছিল। নারীরা এই দামী মেশিন চালাতে পারবেন কিনা তা নিয়েও আলোচনা তৈরী হয়। কিন্তু সিঙ্গারের ব্যবসা নির্ভর করছিল নারীদের ওপর। তিনি নিউ ইয়র্কে একটি দোকান ভাড়া করলেন এবং একজন তরুণীকে নিয়োগ করলেন তার যন্ত্র সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে। সেখানে বেশ ভিড় শুরু হল।
সিঙ্গারের বিজ্ঞাপনেও মহিলাদের সুযোগ দেওয়া হয়। যেখানে সরাসরি নারীর কাছে পণ্যটি বিক্রীর কথাও বলা হয়। এর মধ্যেই নিহিত ছিল নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা। “যে কোনো নারী এর মাধ্যমে বছরে এক হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন”। ১৮৬০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের লেখায় উঠে আসে, সেলাই মেশিনের মতো আর কোন আবিষ্কার মা ও মেয়েদের এতো স্বস্তি দিতে পারেনি।