খরিফ মরশুমে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার প্রক্রিয়ায় নজরদারির খাদ্যদপ্তরের
নতুন খরিফ মরশুমে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার প্রক্রিয়ায় শীর্ষ আধিকারিকদের বিশেষ নজরদারির দায়িত্ব দিচ্ছে খাদ্যদপ্তর। ১৯টি জেলার প্রতিটির জন্য একজন করে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, ডিরেক্টর, যুগ্মসচিব সহ বিভিন্ন পর্যায়ের আধিকারিকদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে চারজন আইএএস আধিকারিক। খাদ্যদপ্তরের সচিব অচিন্ত্যকুমার পতিকে দেওয়া হয়েছে হুগলি জেলার দায়িত্ব। খাদ্যদপ্তরের নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নভেম্বর থেকে আধিকারিকদের প্রতি সপ্তাহে জেলা সফর শুরু করে দিতে হবে। ধান কেনার কাজে নজরদারি ও পরামর্শ দিতে আধিকারিকদের সপ্তাহে দু-তিন দিন জেলায় থাকতে হবে। নভেম্বর থেকে নতুন খরিফ মরশুম শুরু হলেও কেনার কাজ গতি পায় নতুন ধান ওঠার পর মূলত ডিসেম্বর থেকে।
স্বচ্ছতার সঙ্গে যাতে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার কাজটি চলে তার জন্য শীর্ষ আধিকারিকদের বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণত খোলাবাজারের তুলনায় সরকারি নির্ধারিত ধানের দাম অনেকটাই বেশি থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার ব্যাপারে চাষিদের বেশি আগ্রহ থাকে। চাষির নামে ফড়ে বা ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেন এমন অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। সেটা যাতে না-হয় তার জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা পূর্ববর্তী বছরগুলিতে নেওয়া হয়েছে। খাদ্যদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে এবার উল্লেখ করা হয়েছে, ধান কেনার প্রধান উদ্দেশ্য হল ছোট বা প্রান্তিক চাষিরা যাতে অভাবী বিক্রি অর্থাৎ কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য না-হন। খাদ্যদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের যে কাজগুলি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল প্রকৃত চাষির কাছ থেকে ধান কেনার বিষয়টিতে নজর রাখা। প্রসঙ্গত, সরকারের কাছে ধান বিক্রির জন্য নাম নথিভুক্ত করতে কৃষককে বিভিন্ন প্রামাণ্য নথি জমা দিতে হয়। কিন্তু তারপরও কিছু ক্ষেত্রে চাষির নামে ফড়েরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছে এমন অভিযোগ ওঠে। অনিয়মের অভিযোগ বেশি ওঠে গ্রামীণ কৃষি সমবায় সংস্থাগুলির উদ্যোগে আয়োজিত অস্থায়ী ক্রয় শিবিরে। তাই সরকার এখন সরকারি স্থায়ী কেন্দ্রের পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ধান কেনার উপর বিশেষ জোর দিচ্ছে।
আগামী খরিফ মরশুমে মোটা ধানের ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য (এমএসপি) কুইন্টাল প্রতি ১৯৪০ টাকা ধার্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবারের খরিফ মরশুমে এটা ছিল ১৮৬৫ টাকা। এবারের খরিফ মরশুমে প্রায় ৪৬ লক্ষ টন ধান রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কেনা হয়েছে। ধান কেনার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা পূরণ করা হয়েছে। আগামী মরশুমে এই লক্ষ্যামাত্রাই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার প্রতিবারই এফসিআই-কে ৬ লক্ষ টন ধান কিনতে বলে। কিন্তু এফসিআই খুব সামান্য পরিমাণই কেনে।
সরকারি উদ্যোগে কেনা ধান ভানানোর জন্য নথিভুক্ত রাইস মিলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। মিলগুলি যাতে ঠিক সময়ে চাল দেয় তার জন্য এখন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এতে ফলও মিলেছে। চলতি মরশুমে অল্প পরিমাণ চাল এখনও রাইস মিলের থেকে বকেয়া আছে। অক্টোবরের মধ্যে পুরো চাল পাওয়া যাবে বলে আশা করছে খাদ্যদপ্তর। চাল পেতে যাতে কোনও সমস্যা না-হয় তার জন্য মিলগুলিকে এখন ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি জমা রাখতে হয়। মিল মালিকদের সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক জানান, ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির পরিমাণ এবারও একই থাকবে বলে তাঁরা আশা করছেন। একই সঙ্গে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির জন্য পরিবহণ খরচ ৩০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য দাবি করা হয়েছে। ধান ভানানোর খরচ বৃদ্ধিরও দাবি জানানো হয়েছে।