ভ্রমণ বিভাগে ফিরে যান

বাংলার হারানো ইতিহাস অন্বেষণ

January 19, 2020 | 3 min read


বাংলার ঐতিহ্য ইতিহাসের পাতায় পাতায়। সারা বাংলা জুড়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে বহু স্থাপত্য। এই স্থাপত্যগুলির জন্যে বাংলার বিশ্ব জোড়া নাম। কিছু কিছু স্থাপত্যের কথা যেমন এসেছে প্রচারের আলোয়, ঠিক তেমনি কোন কোন ঘটনা রয়ে গেছে আড়ালেই। তাদেরও ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেহাত কম নয়। কালের নিয়মে এবং রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে একপ্রকার হারিয়েই যেতে বসেছে সেই সব মূল্যবান সভ্যতার নিদর্শন।

বাংলার এই হারানো ইতিহাসকে একবার অন্বেষণ করে নেওয়াই যায়। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাংলার সেরকমই কিছু হারিয়ে যাওয়া স্থাপত্য

বানগড়। ছবি সৌজন্যে: Wikipedia

বানগড়

কোটিবর্ষ শহরের উল্লেখ রয়েছে বায়ু পুরাণ, বৃহৎ সংহীতায়। সেই হারানো শহর কোটিবর্ষের কিছু নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া গেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের ছোট্ট শহর গঙ্গারামপুরের বানগড়ে। কোটিবর্ষ শহরটি চন্দ্র, বর্মণ এবং সেন বংশের তৎকালীন রাজধানী ছিল। মালদা থেকে মাত্র ৬৮ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত বানগড়। 

ভারত বর্ষে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হয় বখ্‌তিয়ার খিলজির হাত ধরে। এই বখতিয়ার খিলজি সেন বংশকে যুদ্ধে হারিয়ে রাজত্ব স্থাপন করলে তার রাজধানী হয় দেবীকোট, বর্তমানে গঙ্গারামপুর। সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে বখতিয়ার। অদূরেই রয়েছে তার সমাধি।

দুর্গের অনেকাংশই চলে গেছে মাটির তলায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে খনন কাজ শুরু হয়েছিল। ২০০৯ থেকে তা বন্ধ রয়েছে। 

গৌড়।ছবি সৌজন্যে: wikipedia

গৌড়

এই ঐতিহাসিক শহরটি বাংলাদেশ-ভারত বর্ডারের মাঝামাঝি অবস্থিত। কিছুটা অংশ পড়েছে বাংলাদেশের রাজশাহীতে আর কিছুটা ভারতের মালদা জেলায়। শশাঙ্কের রাজত্বে গৌড় বাংলার রাজধানী ছিল। পাল বংশ এবং সেন বংশের রাজত্বও ছিল গৌড়ে। অবশ্য পরবর্তীতে দিল্লীর সুলতান গৌড় দখল করে। মুঘল সম্রাট হুমায়ুন এর নাম রাখেন জান্নাতাবাদ। যদিও গৌড়ের বেশিরভাগ স্থাপত্যই বাংলার সম্রাটের তৈরী। পুরো অঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন স্থাপত্য ভারতবর্ষের গৌরবময় ইতিহাসের গল্প শোনায়।   

আদিনা-মসজিদ । ছবি সৌজন্যে: wikipedia

আদিনা মসজিদ

মালদা জেলার আদিনা গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদ শুধু বাংলারই নয় মধ্যযুগে সমগ্র ভারত উপমহাদেশের সব থেকে বড় মসজিদ ছিল। এই মসজিদের স্থাপত্য বাংলা, আরব, পারসি এবং বাইজেন্সটাইন শিল্পের মিশ্রন। সিকান্দার শাহ তার রাজত্ব কালে এই মসজিদ বানিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে তাঁকে ওখানেই সমাধিস্থ করা হয়। এই মসজিদের স্থাপত্য অনেক বড় বড় স্থাপত্যকে টক্কর দিতে পারে। 

চন্দ্রকেতুগড়। ছবি সৌজন্যে: wikipedia

চন্দ্রকেতুগড়

কলকাতা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে বিদ্যাধরী নদীর পারের এক অসাধারণ স্থাপত্য। এই জায়গার সাথে চন্দ্রগুপ্তের নবরত্ন জ্যোতিষ বরাহমিহিরের পুত্রবধূ খনার সংযোগ রয়েছে। এই চন্দ্রকেতুগড়ের ইতিহাস মৌর্য বংশেরও প্রাচীন শুঙ্গ-কুষাণ সভ্যতার সময় কালের। গুপ্ত, পাল, সেন বংশের নিদর্শন পাওয়া যায় এই চন্দ্রকেতুগড়ে।

বক্সা-দুর্গ। ছবি সৌজন্যে: wikipedia

বক্সা দুর্গ

এটি অধুনা আলিপুরদুয়ার জেলায় অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত দুর্গ। বক্সা জাতীয় উদ্যানে এই দুর্গ অবস্থিত। ভারত ও তিব্বতের মধ্যে যে রেশম বাণিজ্য পথটি ভুটানের মধ্যে দিয়ে যেত, সেটির একাংশ রক্ষার জন্য ভুটান রাজারা এই দুর্গটি ব্যবহার করতেন। ১৯৫০ সালে চীন তিব্বত দখল করে নিলে, বহু শরণার্থী এই অঞ্চলে উপস্থিত হন। সেই সময় পরিত্যক্ত দুর্গটি শরণার্থী আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

বিনা বিচারে বন্দী করে রাখার জন্যে পাহাড়ের ওপর দুর্গম এই স্থানকে বেছে নেয় ইংরেজরা। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত এখানে মোট বন্দী ছিলেন ৫২৫ জন। বন্দী বিপ্লবীরা একবার জেলের ভেতরে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করেন, এবং কবিকে জন্মদিনের অভিনন্দন জানান। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তখন দার্জিলিং অবস্থান করছিলেন। এ কথা জানতে পেরে তিনি তার প্রত্যুত্তর দেন এই বলে “অমৃতের পুত্র মোরা কাহারা শোনাল বিশ্বময়, আত্মবিসর্জন করি আত্মারে কে জানিল অক্ষয়”।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Heritage, #West Bengal, #Historical Places

আরো দেখুন