বিদেশে কাজের খোঁজে বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ দেবে রাজ্য
এ বার বিদেশে কর্মসংস্থানের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গ!
বেকার যুবক-যুবতীদের কারিগরি দক্ষতা বাড়িয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান কী ভাবে দেওয়া যায়, তা নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে এক দফা বৈঠকও হয়েছে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের। সূত্রের খবর, আমেরিকা, ইউরোপ বা পশ্চিম এশিয়ারদেশগুলিতে কী ধরনের দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে, তা বুঝে এখানে বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। গোটা দেশের জন্যই কেন্দ্রের এমন কর্মসূচি রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গও তাতে শামিল। সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দেশে এমন এক কোটির বেশি কর্মপ্রার্থী বিদেশে কাজের খোঁজে নাম নথিভুক্ত করেছেন। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে তা লক্ষাধিক।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই প্রশিক্ষণের ব্যাপারে বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজ্যে কারিগরি শিক্ষা এবং শ্রম দফতর। সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রকের কনসুলার পাসপোর্ট ও ভিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব ও মন্ত্রকের যুগ্মসচিবের সঙ্গে রাজ্যের কর্তাদের বৈঠক হয়েছে। জানা গিয়েছে, যেখানে বয়স্কদের সংখ্যা তুলনায় বেশি, যেমন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপান, কোরিয়ার মতো কিছু দেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। আরব দেশগুলিতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা নতুন নয়। কিন্তু দক্ষতার প্রশ্নে সেই দেশগুলির নিজস্ব মানদণ্ড রয়েছে। ফলে বেকার যুবক-যুবতীদের সেই মানের দক্ষতা থাকা জরুরি।
কী ধরনের কাজের সুযোগ আছে দেশগুলিতে? এক কর্তার কথায়, “অনেক দেশে দেখাশোনা করার লোক, শিল্পে দক্ষ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, নার্স বা অটোমোবাইল (গাড়ি)-সহ অনেক পেশায় দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়। আবার জার্মানি, জাপানের মতো দেশগুলিতে তাদের ভাষা জানা কর্মীদের চাহিদা থাকে। ইংরেজি জানা জরুরি। ফলে কারিগরি প্রশিক্ষণের সঙ্গে ভাষা-প্রশিক্ষণ দেওয়াও পরিকল্পনার অঙ্গ।” প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই একাধিক দেশের সঙ্গে ভারতের নির্দিষ্ট চুক্তি হয়েছে। ভারত থেকে ভিনদেশে কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই সেই চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য। এ কাজে একাধিক দেশের সরকারের সঙ্গে নিরন্তর সমন্বয়ও রাখছে বিদেশ মন্ত্রক।
কারিগরি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দফতরের মন্ত্রী হুমায়ূন কবীর বলেন, “একটি বৈঠক হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াতেও শিল্পক্ষেত্রে প্রচুর কর্মীর চাহিদা রয়েছে। আসিয়ান-এর দেশগুলিতে এমন সুযোগ কী ভাবে বাড়ানো যায়, তার ভাবনাচিন্তাও চলছে। কিন্তু কত জন ইচ্ছুক চাকরিপ্রার্থী পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।”
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের বক্তব্য, তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছিল, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানই এই দফায় তাদের অগ্রাধিকার। জোর পড়েছিল কারিগরি শিক্ষার উপর। কিন্তু সরকার লক্ষ করেছে, অতীতে প্রতি বছর যত সংখ্যায় কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার তুলনায় কর্মসংস্থানের হার নেহাতই কম। এই সমস্যা মেটাতে প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কমিটি গড়েছে রাজ্য। আবার বর্তমান মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী প্রত্যেক জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন, জেলায় জেলায় শিল্পমহলের চাহিদা বুঝে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে কারিগরি শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বর্তমান নীতি— শিল্পমহল তাদের চাহিদা জানাক, সেই মতো দক্ষ কর্মী জোগানের ব্যবস্থা করবে সরকার।
অভিজ্ঞ আমলাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, দেশে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি আশাপ্রদ নয়। কোভিড এবং লকডাউন পরবর্তী সময়ে আর্থিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে শিল্পমহল। ফলে তাদের তরফে এখনই এমন চাহিদা থাকবে না, যা কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রাতারাতি বাড়িয়ে তুলতে পারে। আবার বড় বা উল্লেখযোগ্য শিল্পায়ন এখনও না হওয়ায় কাজের চাহিদা মেটানো বেশ কঠিন। বিরোধীদেরও বক্তব্য, রাজ্যে কাজ বা পারিশ্রমিক যথেষ্ট না থাকার কারণে বহু মানুষকে পরিযায়ী শ্রমিক হতে হয়েছে, কোভিড পরিস্থিতি যে সমস্যা চোখে আঙুল দেখিয়ে দিয়েছে। অথচ চলতি পরিস্থিতিতে বেকারত্বে রাশ টানতে চটজলদি কিছু পদক্ষেপ জরুরি। কৃষি বা উৎপাদন ক্ষেত্রের যা পরিস্থিতি, তাতে এখনই সেখানে বড় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব নয়। তার জন্য বহু সময় লাগবে। ততটা সময় রাজ্য বা কেন্দ্র, কোনও সরকারের হাতেই আপাতত নেই।
তবে মন্ত্রীর দাবি, কর্নাটকে জিন্দলদের ইস্পাত কারখানায় এখনই এক হাজার মহিলা কর্মীর প্রয়োজন। ১০ মাস প্রশিক্ষণের পরে মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে তাঁরা কাজ পাবেন। এ-রকম অনেক সংস্থাই যোগাযোগ করছে, কিন্তু বাইরে যেতে আগ্রহী চাকরিপ্রার্থী না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর কথায়, “প্রার্থী এবং অভিভাবকদের কাউন্সেলিংয়ের কথা ভাবছি আমরা। চাকরিস্থল যে সব সময় ঘরের কাছে হবে এমন নয়। ফলে পেশাদার মানসিকতা জরুরি। পরিবারের সমর্থন পেলে প্রার্থীরাও সিদ্ধান্ত নিতে সাহসী হবেন।”