স্বাস্থ্যসাথী ফেরালে কাউন্টার থেকেই ফোন করুন, নির্দেশ জারি স্বাস্থ্য কমিশনের
‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ফেরালে ওই হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের অ্যাডমিশন কাউন্টার থেকেই আমাদের জানান। কার্ডের পিছনে একটি টোল ফ্রি নম্বর থাকে। সেই নম্বরে ফোন করুন। হয় আমরা, না হলে স্বাস্থ্যভবনের স্বাস্থ্যসাথী শাখা ঠিক অভিযোগ শুনবে। যথাযথ ব্যবস্থাও নেবে।’ বুধবার এক অনলাইন সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানালেন রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারপার্সন অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও রোগী ফেরানো সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে এদিন চারটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর প্রকাশ করেন অসীমবাবু। বলেন, কার্ড রিফিউজ করলে অ্যাডমিশন কাউন্টারে দাঁড়িয়েই নম্বরগুলিতে ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ করুন। হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলিও সতর্ক হবে।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করা সত্ত্বেও বেসরকারি হাসপাতালগুলির টনক নড়েনি। তিনি সাফ হুঁশিয়ার করেছিলেন, রোগী ফেরালে লাইসেন্স বাতিল করে দেব। নড়েচড়ে বসে কমিশন। কমিশন কর্তারা দফায় দফায় স্বাস্থ্যসাথীর আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সমাধানসূত্র খুঁজতে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এরপরই কমিশন এদিন চারটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর জানায়। নম্বরগুলি হল—৯০৭৩৩১৩২১১, ৯৫১৩১০৮৩৮৩, ৮৩৩৪৯০২৯০০ এবং ৯৮৩০১৬৪২৮৬।
এদিন স্বাস্থ্যসাথী সংক্রান্ত সাতটি অভিযোগের শুনানি করে কমিশন। শঙ্কর শী নামে সুন্দরবনের বাসিন্দা এক হতদরিদ্র মানুষের ঘটনায় পঞ্চসায়র লাগোয়া এক প্রাইভেট হাসপাতালকে বিনামূল্যে যাবতীয় চিকিৎসা করতে নির্দেশ দেয়। স্ত্রীকে নিয়ে শঙ্করবাবু ৩ এপ্রিল মাছ ও কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবন যান। সেসময় বাঘ দু’জনকে আক্রমণ করে। স্ত্রীর তৎপরতা ও সাহসে প্রাণে বাঁচে দম্পতি। কিন্তু বাঘের কামড়ে শঙ্করবাবুর কাঁধ সহ শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়। স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরই পঞ্চসায়রের ওই বড় প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। অভিযোগ, সঙ্গে কার্ড থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালটি সাফ জানায়, স্বাস্থ্যসাথী রোগী তারা ভর্তি নিচ্ছে না। তাছাড়া শঙ্করবাবুর বেশিরভাগ জরুরি চিকিৎসাই প্রথম হাসপাতাল করে দিয়েছে। সেকারণে ৩ ও ৫ এপ্রিল—দু’দিনই আউটডোরে ড্রেসিং করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৭ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ চিকিৎসা হয়নি। শেষে এক সহৃদয় চিকিৎসক ও স্থানীয় গ্রামবাসীদের উদ্যোগে ছোট একটি নার্সিংহোমে শঙ্করবাবুর অপারেশন হয়। এক মাস সেখানে ভর্তি ছিলেন তিনি। সব খরচ মেটাতেও পারেননি। ওই নার্সিংহোম সেজন্য পীড়াপীড়ি করেনি। এইসব জেনে ও প্রমাণ পেয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের দুই সদস্যের উপস্থিতিতে বোর্ড গঠন করে শঙ্করবাবুর চিকিৎসা করতে হবে।
এদিন গৌরচন্দ্র দে, বুরান আলি, চিরঞ্জিৎ সাহা, শুভদীপ ঘোষ, জাইরুদ্দিন প্রমুখ রোগী বা তাঁদের পরিবারও একইভাবে ভুগেছেন। তাঁরাও অভিযোগ জানিয়েছেন কমিশনে। শুনানি হয়েছে সেই সব ঘটনার। শুভদীপবাবুর অভিযোগের ঘটনায় পূর্ব বর্ধমানের এক প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসককে (স্বাস্থ্য) তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালটির লাইসেন্স রিনিউ হবে না। এছাড়া নানা ঘটনায় কোথাও ৫ হাজার, কোথাও ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এদিকে এসইউসিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ছাড়াও সরকারি হাসপাতালে নিরখচায় চিকিৎসা পরিষেবা চালু রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন।4th