ভাইফোঁটা আর দেওয়া হল না সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের চার বোনের
শুক্রবারই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। শনিবার ভাইফোঁটা। সেইমতো সব আয়োজনও ছিল চার বোনের। রীতি মেনে একই নকশার শাড়ি কিনেছিলেন তাঁরা। তা পরেই দাদাকে ফোঁটা দেওয়ার কথা ছিল বোনেদের। তবে ঠিক আগের দিনই না ফেরার দেশে চলে গেল প্রিয় দাদা। ভাইফোঁটা আর দেওয়া হল না। বঙ্গ-রাজনীতির বর্ণময় চরিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে এভাবে শোকে বিহ্বল তাঁর বোনেরা। তনিমা চট্টোপাধ্যায় ও বুলবুল চট্টোপাধ্যায়। এদিন সকালে সুব্রতবাবুর বালিগঞ্জে বাড়িতে যান তাঁরা। সমবেদনা জানান বউদি ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়কে।
ছোখ ছলছল করছে। কোনওভাবে নাক টানতে টানতে স্মৃতির সরণি ঘেঁটে তনিমাদেবী জানালেন, ‘পিতৃহারা’ হলাম। অত্যন্ত স্নেহ করতেন। এখনও কোনও ভুল হলে ধমক দিতেন দাদা। সেই ধমক দেওয়ার আর কেউ থাকল না। দিনরাত যোগাযোগ। এমন কোনও দিন যায়নি, যেদিন আমার সঙ্গে দাদার কথা হয়নি। একটাই আফশোস সারাজীবন তাড়া করে বেড়াবে। ভাইফোঁটার ঠিক আগের দিন হারালাম ওঁকে। কপালে আঙুল ছুঁইয়ে আশীর্বাদটা আর নেওয়া হল না। চোখে আর জল ধরে রাখতে পারলেন না তনিমাদেবী। ভাইফোঁটার ঠিক আগের দিন দাদার চলে যাওয়াটা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সুব্রতবাবুর বোনটি।
তনিমাদেবী আরও জানান, লক্ষ্মীপুজোয় শেষবার দেখা হয়েছিল। এভার গ্রিনের প্যান্ডেলের ‘শুভ বিজয়া’ বলেছিলাম দাদাকে। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পিজিতে ভর্তি হয়েছিলেন। তাই কোনও আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন ছিল না এবারের ভাইফোঁটায়। ভেবেছিলাম শুধু ফোঁটাটা দিয়ে আসব। একটু সুস্থ হয়ে উঠলে জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া হবে। খুবই খাদ্যরসিক ছিলেন সুব্রতবাবু। এমনটাই জানালেন তাঁর স্নেহের বোন। তিনি মূলত সাবেকি, বাঙালিয়ানা ঘরানার খাবারই ছিল তাঁর ফেভারিট। প্রিয় মেনুর তালিকায় ছিল কচিপাঁঠার ঝোল, কাতলা (পেটি) কালিয়া, নারকেল বড়া, পোস্ত বড়া, শুক্তো, মৌরলা মাছের টক ইত্যাদি। দাদাকে আর রান্না করে খাওয়াতে পারব না।
এদিন বালিগঞ্জের বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ছোট বোন বুলবুল। বললেন, আমার জীবনের সবটা জুড়েই রয়েছে দাদার স্মৃতি। ভাইফোঁটার দিন জলখাবারের মেনু ছিল একেবারে বাঁধা। সাদা আলুর চচ্চড়ি, বেগুন ভাজা আর ফুলকো লুচি। বহুবার দাদার জন্য রেঁধে দিয়েছে। এবার নিজে থেকেই আমার হাতে বানানো নাড়ু খেতে চেয়েছিল। বাড়িতে বয়েম ভর্তি নাড়ু তৈরি করে রাখা আছে। হাসপাতাল থেকে ফিরলেই বাড়িতে গিয়ে খাওয়াব ভেবেছিলাম। বয়েমেই পড়ে থাকল দাদার শেষ আবদার।