বাঙাল ভাষার জোরেই সাম্যময় হয়ে উঠেছিলেন আপামর বাঙালির ভানু

একবার নেমে আয় নেমে আয় ও বাপ কেদার আমার নেমে আয় নেমে আয়…বলি ও কেদার রে…সাড়ে চুয়াত্তর মনে পড়ে? ১০৩-এ পৌঁছলেন ভানু। আমগো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ জন্মদিন।

August 26, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

সৌভিক রাজ


নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:৪৬: সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় (Samyamoy Bandyopadhyay) এবং বাংলার হাস্যকৌতুক অভিনয়, এই দুই আজ সমার্থক। কি চিনতে পারলেন না তো? আরে, সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন ভানু। হ্যাঁ ঠিকই ধরসেন, আপনাগো ভানুর কথাই কইতাসি। সেই কাল্ট হয়ে যাওয়া সংলাপ ‘মাসিমা মালপোয়া খামু’ মনে পড়ে? সেই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাই বলছি। যাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ তামাম বাংলা, যাঁর নিজস্ব বাচনভঙ্গিতে মেতে থাকত আপামোর বাংলার শ্রোতা-দর্শক। প্রায় তিনশোর বেশি ছবিই করেছেন তিনি তাঁর অভিনয় জীবনে। এছাড়াও বানিয়েছেন অজস্র কমিক, কাঁপিয়েছেন মঞ্চ। মাতিয়েছে গ্রাম-বাংলার যাত্রার আসর। ওপারের বাঙাল ভাষাকে করে তুলেছিলেন শহুরে বাঙালির কাছের ভাষা, হৃদয়ের ভাষা। বাংলায় খুব কম অভিনেতার নামে ছবি হয়েছে, বলা ভালো ভানুর ব্র্যান্ড নেমেই ছবি হত ও চলত। যেমন ভানু পেল লটারি, ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিসটেন্ট। অভিনেতা ভানুর জীবনের প্রথমার্ধের অনেকটা সময় কেটেছে ওপার বাংলার বিক্রমপুরে। সেখানেই কিশোরবেলা কাটিয়েছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্রাবস্থায় ভানু যেমন ছিলেন বিজ্ঞানী সত্যেন বসু, কবি জসীমউদ্দিনের প্রিয়পাত্র, অন্য দিকে তেমনই তিনি ছিলেন দেশপ্রেমী, স্বদেশীও করতেন নিয়মিত। কিশোর বয়স থেকেই বুকের মধ্যে নিষিদ্ধ বই, রিভলভার নিয়ে পাচার করতেন তিনি। জামার মধ্যে, টিফিন বাক্সে অস্ত্র নিয়ে পৌঁছে দিতেন বিপ্লবীদের। বিপ্লবী সমিতির পত্রিকাও তিনি বিক্রি করতেন, বিলি করতেন বিপ্লবী সংগঠনের প্রচারপত্র, তাও গুপ্তসমিতিগুলির মতোই গোপনে। গোপন ভাবে নানান বিপ্লবী কার্যকলাপ চালিয়ে যেতেন।

দীনেশ গুপ্তর সাইকেলে চেপেই নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন ভানু। আট নয় বছর বয়স থেকেই দীনেশ গুপ্তের সান্নিধ্যে এসেছিলেন বালক ভানু। তাঁর দীনেশদার সঙ্গেই তিনি দেখেছেন বহু সিনেমা – লন চ্যানির হাঞ্চব্যাক অফ নোতরদাম, চ্যাপলিনের গোল্ড রাশ।এছাড়াও লরেল হার্ডি, বাস্টার কিটন, হ্যারি ল্যাংডনের ছবিগুলি ভানুকে কমেডির প্রতি আকৃষ্ট করেছিল, এসবই তিনি তাঁর দীনেশদার সঙ্গেই দেখেছিলেন। এমনকি দীনেশের আদেশে ঢাকার সদরঘাটে স্পাই হিসেবে গুপ্তচরবৃত্তির কাজও করতেন ভানু। ভানুর দায়িত্ব ছিল সদরঘাটে কোথায় কোন পুলিশ আসছে যাচ্ছে, কে কোথায় আসছে, কোন সাহেব আসছেন, টাঙ্গা চড়ে কোনদিকে চলে যাচ্ছে ইত্যাদি পুঙ্খানুপুঙ্খ দীনেশ গুপ্তকে জানানো। ঢাকাইয়া গাড়োয়ানের পাশে বসে টাঙ্গা চেপে পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে অনুসরণ করতে করতে আঞ্চলিক ‘কুট্টি ভাষাটাও রপ্ত করে ফেলেন ভানু। এর অনেক পরে ১৯৪৩ সালে ‘ঢাকার গাড়োয়ান’ নামে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমিক স্কেচের রেকর্ড বেরোয়, যা পরোক্ষে এই সময়েরই ফলশ্রুতি। মাঝিমল্লা টাঙ্গাওয়ালাদের সঙ্গে ঘুরতেন ভানু যা পরবর্তীতে তাঁর হাস্যরসের উপাদান জুগিয়েছিল। অশিক্ষিত কুট্টিদের সেন্স অফ হিউমারই যে তাঁকে কমেডিয়ান হতে প্রেরণা জুগিয়েছিল তাও অকপটে আজীবন স্বীকার করে গিয়েছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় (Bhanu Bandopadhyay)। 

একবার নেমে আয় নেমে আয় ও বাপ কেদার আমার নেমে আয় নেমে আয়…বলি ও কেদার রে…সাড়ে চুয়াত্তর মনে পড়ে? ১০৩-এ পৌঁছলেন ভানু। আমগো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ জন্মদিন। তবে কেক বা পায়েসে নয়, তাঁর জন্মদিনে তাঁর সাথেই বাঙাল-ই’রা বলে উঠুক মাসিমা মালপোয়া খামু। সেই ছোট্ট ঝুড়ির পুতুলের সাম্রাজ্য সাজিয়ে দিক… ভোলাকে গুঁতো দিতে বলুক…যেভাবে সত্যেন বোসের ছাত্র আর দীনেশ গুপ্তের ভাবশিষ্য হয়ে উঠেছিলেন সাম্যময় থেকে ভানু বা জহরের ভেনো, বাঙালির সেই হাসির পথ অক্ষয় অমর হোক। আশিতে এসেও হাসিতে থাকুক বঙ্গ সন্তানরা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen