“বাংলায় যদি ১ কোটি রোহিঙ্গা থাকে তাহলে তালিকা প্রকাশ করুন”, কমিশনকে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের

December 27, 2025 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:১০: রাজ্যে চলছে এসআইআরের (SIR) দ্বিতীয় পর্যায়ে রি-ভেরিফিকেশন (re-verification)। ভোটার তালিকা সংশোধন এবং নাম বাদ দেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission) ফের নিশানা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি, এক মাস আগে করা তাঁর ৫টি প্রশ্নের উত্তর কেন এখনও পাওয়া গেল না, তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি।

শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করেন, ‘‘শতাংশের নিরিখে দেখলে সারা দেশের মধ্যে বাংলাতেই সবথেকে কম নাম বাদ গিয়েছে।’’ অথচ বিজেপি নেতাদের দীর্ঘদিনের দাবি, বাংলায় নাকি ১ কোটি রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বাস করেন। এই প্রসঙ্গে কমিশনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘‘মোট ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার নামের মধ্যে ঠিক কতজন রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি রয়েছেন, তা কমিশনকে প্রকাশ্যে জানাতে হবে।’’

শুধু তাই নয়, ‘এসআইআর’ (SIR) বা বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তাঁর যুক্তি, অনুপ্রবেশের তত্ত্ব যদি খাড়া করা হয়, তবে যে রাজ্যগুলি দিয়ে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা থাকে- যেমন মিজোরাম, মেঘালয় বা ত্রিপুরার মতো সীমান্তবর্তী রাজ্য, সেগুলির একটিতেও কেন SIR প্রক্রিয়া চালানো হল না? এই বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের একমাত্র লক্ষ্য বাংলার মানুষকে হয়রানি করা।’’

অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বাংলার তুলনামূলক বিচার করে তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, যদি বাংলায় সবথেকে কম নাম বাদ গিয়ে থাকে এবং উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাটের মতো রাজ্যে সবথেকে বেশি নাম কাটা যায়, তবে সেই রাজ্যগুলিতে কেন মাইক্রো অবজার্ভার (Micro Observer) নিয়োগ করা হল না? পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, উত্তরপ্রদেশে প্রায় ১৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৪ কোটি মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এক মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এই প্রশ্নগুলোর কোনও সদুত্তর না পাওয়ায় কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন তিনি।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে অভিষেক শেষে ১০০ দিনের কাজের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘এত বড় গড়মিল যদি উত্তরপ্রদেশে থাকে, তাহলে সেই রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করা হবে না কেন?’’

পরিসংখ্যান তুলে ধরে অভিষেকের দাবি, তামিলনাড়ুর মোট জনসংখ্যা ৭ কোটি ৭৫ লক্ষ হলেও ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ৫৭ লক্ষ ৩০ হাজার নাম, যা শতাংশের হিসেবে ১২.৫৭। গুজরাটে জনসংখ্যা ৭ কোটি ৩৯ লক্ষ, সেখানে বাদ গিয়েছে ৭৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ভোটারের নাম, প্রায় ১০ শতাংশ। ছত্তীসগড়ে ৩ কোটি ১২ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে বাদ পড়েছে ২৭ লক্ষ ৩৪ হাজার ভোটার, যা ৮.৭৬ শতাংশ। আর পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ১০ কোটির কিছু বেশি জনসংখ্যার নিরিখে ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে প্রায় ৫৮ লক্ষ নাম, শতাংশের হিসেবে প্রায় ৫।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যদি সত্যিই ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ভোটারের নামে তথাকথিত ‘লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি’ বা বাতিলের তালিকা থাকে, তবে নির্বাচন কমিশনকে তা প্রকাশ্যে আনতেই হবে। একই সঙ্গে এক কোটি রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি থাকার যে দাবি করা হচ্ছে, তার পক্ষে নথিও জনসমক্ষে আনার দাবি জানান তিনি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “তালিকা দেখান, নচেৎ বাংলার মানুষের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।”

ভোটার তালিকা যাচাইয়ের দায় কার, সে প্রশ্নও তোলেন অভিষেক। তাঁর যুক্তি, বিএলও ও ইআরও-রা যে কাজ করতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এক মাসের বেশি সময় নিয়েছেন, তা কীভাবে একদিনে বা এক ঘণ্টার মধ্যেই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হল। এই সংক্রান্ত একাধিক স্ক্রিনশট তাঁদের হাতে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এছাড়াও সীমা খন্না (Sima Khanna) নামে এক আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তোলেন অভিষেক। তিনি প্রশ্ন করেন, কার নির্দেশে ওই আধিকারিক কাজ করছেন। তাঁদের কাছে থাকা চ্যাটের স্ক্রিনশটে সফটওয়্যারের ত্রুটির কারণেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে বলে জানান।

তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, এই সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হবে। অভিষেক আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার কাউকে রক্ষা করছে না। তাঁর কথায়, যদি সত্যিই কোনও তালিকা থেকে থাকে, তবে তা প্রকাশে আপত্তি কোথায়। তালিকা না দেখিয়ে ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি, যা তাঁর মতে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।

এই প্রসঙ্গেই নির্বাচন কমিশনের (ECI) ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তিনি জ্ঞানেশ কুমারকে (Gyanesh Kumar) উদ্দেশ করে বলেন, ”মনে রাখতে হবে এটা ইলেকশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া, এফ গভার্মেন্ট নয়। কমিশন বিজেপির পার্টি অফিস নয়। নাম বাদ যাওয়া নিয়ে যে যে প্রশ্ন উঠছে তার উত্তর কমিশনকে দিতে হবে। নাহলে সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”

অভিষেক জানান, বিষয়টি নিয়ে বছরের শেষ দিনে, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর তিনি নিজেই দিল্লিতে যাবেন। জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিস্তারিত হিসেব চাইবেন বলেও জানান তিনি। স্পষ্ট করে বলেন, সন্তোষজনক উত্তর না মিললে নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাও করা হবে।

 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen