SIR ইস্যুতে তীব্র আক্রমণ অভিষেকের, লক্ষ বাঙালি নিয়ে কমিশন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি
তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, “বাংলায় একজন বাঙালিরও নাম যদি ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে, এক লক্ষ বাঙালিকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর ঘেরাও করব।”

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:৩১: ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR) নিয়ে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, “বাংলায় একজন বাঙালিরও নাম যদি ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে, এক লক্ষ বাঙালিকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর ঘেরাও করব।”
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন কমিশন SIR (Special Intensive Revision) চালু করেছিল। শোনা যাচ্ছে, একই প্রক্রিয়া বাংলাতেও কার্যকর হতে পারে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বাঙালি অস্মিতা রক্ষায় সরব হয়েছিলেন। এবার সেই ইস্যুতেই কড়া সুরে সতর্ক করলেন অভিষেক।
বাংলায় বিজেপির চক্রান্ত, ১০০ দিনের কাজের তহবিল থেকে রাজ্যে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বিষয় উত্থাপন করেন অভিষেক।
বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ
অভিষেকের অভিযোগ, বাংলায় SIR চালুর মাধ্যমে গরিব মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিজেপি। যে প্রক্রিয়া সাধারণত ১–২ বছর সময় নেয়, তা মাত্র ১–২ মাসে শেষ করার চেষ্টা চলছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বিহারের কথা তুলে ধরেন, যেখানে ৬৫ লক্ষ নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। কংগ্রেস মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ঘটনার উল্লেখ করে প্রাক্তন BLO, ERO ও DEO-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে। একই সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অভিষেক জানান, বালুরঘাট, বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়ার মতো আসনেও বিজেপি সামান্য ভোটে জিতেছে, এবং এই সব ক্ষেত্র নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
১১ আগস্ট দিল্লিতে INDIA জোটের বিক্ষোভ
SIR ইস্যুতে INDIA জোটের সব দল একজোট হয়েছে। আগামী ১১ আগস্ট সংসদ থেকে মিছিল করে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে যাবে জোটের প্রতিনিধিদল। তৃণমূলও সেই কর্মসূচিতে থাকবে, তবে অভিষেক নিজে থাকবেন না বলে জানান, সেদিন তাঁর উত্তর দিনাজপুর ও বহরমপুরে পূর্বনির্ধারিত জেলা কর্মসূচি রয়েছে। দলের অন্যান্য সাংসদরা বিক্ষোভে অংশ নেবেন।
সংসদে আলোচনা দাবি
লোকসভার দলনেতা হওয়ার পর অভিষেক (Abhishek Banerjee) স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে SIR, ভিনরাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর অত্যাচার এবং বাংলা ভাষা ও পরিচয় নিয়ে অপমানের বিষয়ে সংসদে আলোচনা চেয়েছিলেন। তবে সেই দাবি গৃহীত হয়নি। তাঁর অভিযোগ, “কেন্দ্র কিছু লুকোতে চাইছে বলেই SIR নিয়ে আলোচনা এড়াচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে— এটা মেনে নেওয়া যায় না। যে আমাদের পাশে দাঁড়াবে, আমরা তার সঙ্গেই থাকব। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থেই এই লড়াই।”
SIR-এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, যে প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছর লাগে, তা কয়েক মাসে কীভাবে শেষ হবে? ২০০২ সালে শেষবার SIR হয়েছিল, যার তালিকা প্রকাশ হয় ২০০৪-এ। যদি ভোটার তালিকায় ত্রুটি থাকে, তবে ২০২৪ সালে সেই তালিকা ব্যবহার করে গঠিত সরকারও অবৈধ— প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা, এমনকি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও। “তাহলে তখন কেন SIR হয়নি?”— পাল্টা প্রশ্ন তোলেন তিনি।
১০০ দিনের কাজ ও তহবিল বন্ধের অভিযোগ
অভিষেক অভিযোগ করেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ১ আগস্ট থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি কেন্দ্র। ৮ আগস্টেও কাজ শুরু হয়নি, যা আদালত অবমাননার শামিল। প্রয়োজনে তিনি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান। পাশাপাশি, জল জীবন মিশনের ২,৫০০ কোটিরও বেশি টাকার বরাদ্দ আটকে দেওয়ার অভিযোগও তোলেন।
বিজেপিকে কড়া বার্তা
“২০১৪ সাল থেকে বাংলায় হারছে বিজেপি। এখন প্রতিদিন নেতারা এলেও কোনও লাভ হবে না। ভোটার তালিকা থেকে নাম কেটে মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে। আমরা বলছি ‘No SIR’, বাংলায় SIR হবে না,” মন্তব্য অভিষেকের। তিনি সতর্ক করে দেন, একজনের নাম বাদ পড়লেও ১ লক্ষ বাঙালিকে নিয়ে কমিশন ঘেরাও হবে।
ভোটার তালিকায় অনিয়ম
অভিষেকের দাবি, একই নামে একাধিক ভোটার, ভূতুড়ে নাম, এবং এক ব্যক্তি একাধিক জায়গায় ভোট দেওয়া, সবই প্রমাণ করে সরকার অবৈধ। “যে অস্ত্র দিয়ে আমাদের আঘাত করতে চেয়েছিল, সেটাই তাদের বিরুদ্ধে যাবে। মানুষ ক্ষমা করবে না,” হুঁশিয়ারি দেন তিনি।