পাঞ্জাবের আলুবীজের বদলে বাঁকুড়ার দেশজ বীজ ব্যবহারে উৎসাহ কৃষি দপ্তরের

শুধু তাই নয়, এর জন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে চাষিদের পুস্তিকা বিলির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

November 10, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

বাঁকুড়ার ‘বাংলা দানা’ দিয়েই পাঞ্জাবের ‘গুলতি’কে জব্দ করতে চাইছে কৃষিদপ্তর। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঞ্জাবের গুলতির মার্বেলের মতো ছোট সাইজের আলু (Potato) বাঁকুড়া (Bankura) সহ কয়েকটি জেলায় বীজের বাজার কব্জা করেছে। একচেটিয়া ব্যবসার কারণে তাতে দেদার কালোবাজারিও হচ্ছে। এমনকী, এবার ১০০টাকা কেজি দরেও চাষিরা পাঞ্জাবের ‘গুলতি’ আলু বীজ কিনতে পিছপা হননি। তাই জেলা কৃষিদপ্তর এবার চাষিদের বীজের জন্য নিজের জমিতেই বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করে মাঝারি সাইজের (স্থানীয় ভাষায় বাংলা দানা) আলুচাষের পরামর্শ দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, এর জন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে চাষিদের পুস্তিকা বিলির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কৃষিদপ্তরের বাঁকুড়া জেলার ডেপুটি ডিরেক্টর সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, পাঞ্জাবের আলুবীজের গুণগত মান না জেনেই শুধুমাত্র হুজুগে মেতে চাষিরা ওই বীজ কিনছেন। বারবার এবিষয়ে সচেতন করা হয়েছে। তবুও তাঁদের হুঁশ ফেরেনি। অথচ সামান্য পদ্ধতি অনুসরণ করলেই চাষিরা নিজেদের বীজ নিজেরাই তৈরি করতে পারবেন। তাতে চাষের খরচও অনেকাংশে কমবে। তাই এবার চাষিদের বীজ তৈরির কৌশল সম্পর্কিত একটি করে পুস্তিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ৭৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলুবীজের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, সরকারি ও বেসরকারি ফার্মে যা উৎপাদন হয়, তা খুবই নগণ্য। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাঞ্জাবের বিভিন্ন ফার্ম এরাজ্যের বীজের বাজার দখল করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুলতির মতো ছোট সাইজের আলুর গুণগত মান না জেনেই চাষিরা তা বীজ হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাতে অনেকে ঠকছেনও। তবুও পাঞ্জাবের ‘গুলতি’ আলু বীজেই চাষিরা মজেছেন। সেই সুযোগে ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে।

এদিকে পাঞ্জাব থেকে আসা আলুর প্যাকেটে ‘বীজ’ লেখা না থাকায় দামে লাগাম টানার মতো কৃষিদপ্তরের হাতে কোনও আইনি অস্ত্রও নেই। তাই পাঞ্জাবের ‘গুলতি’কে জব্দ করতে চাষিদেরই মাঠে নামার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সামান্য পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজ হিসেবে মাঝারি দানার আলু উৎপাদনের মাধ্যমে ‘গুলতি’র গতিকে রদ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তার জন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁদের হাতে একটি করে পুস্তিকা দেওয়া হচ্ছে।

দপ্তরের আধিকারিকরা বলেন, বীজ আলু উৎপাদনের জন্য প্রথমেই উপযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে। ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও জমি সমতল করতে হবে। জল নিকাশের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সরকার স্বীকৃত সার্টিফায়েড বীজ আলু সংগ্রহ করতে হবে। আগের বছর যে জাতের আলু লাগানো ছিল, এবার তা পরিবর্তন করতে হবে। ২০-৩০ গ্রাম ওজনের সুস্থ, দাগহীন, নীরোগ এবং কমপক্ষে দু’থেকে তিনটি কল যুক্ত গোটা আলু ব্যবহার করা ভালো। তা শোধন করে নভেম্বরের শুরুর দিকে জমিতে বসাতে হবে। মাটিতে ‘জো’ বা রস থাকতে হবে। প্রয়োজনে আলু বসানোর পর ঝাপটা সেচ দিতে হবে। এর ফলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালোই হবে। সাত থেকে আট দিন অন্তর সেচ দিতে হবে। তবে ভেলির চার ভাগের তিনভাগ অংশের বেশি যেন জলে না ঢোকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আলু তোলার অন্তত ১০দিন আগে সেচ বন্ধ করতে হবে। ওই সময়ে গাছের উপরের কাণ্ড কেটে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আলু তুলে তা বাছাই করার পর উপযুক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে সমস্ত হিমঘরে বীজ আলুর জন্য পৃথক চেম্বার রয়েছে সেখানে সংরক্ষণ করলে ভালো হয়। কারণ হিমঘরে চার ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা থাকলে বীজের ক্ষতি হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen