আমাদের গর্ব ভারতের বহুত্ববাদ, অমিত শাহের মন্তব্য শুধু বিতর্কিত নয়, বিপজ্জনকও

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এক মন্তব্য দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

June 23, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

শুভম গাঙ্গুলি

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ৮:০০: সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এক মন্তব্য দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “এই দেশে যারা ইংরেজি বলেন, তারা ভবিষ্যতে লজ্জিত বোধ করবেন – এমন একটি সমাজ গড়ে উঠতে চলেছে।” এই মন্তব্য শুধু বিতর্কিত নয়, গভীরভাবে বিপজ্জনকও। কারণ, এটি সরাসরি ভারতের বহু ভাষার, বহু সংস্কৃতির সহাবস্থানের ঐতিহ্যকে আঘাত করে।

ভারত মানেই বহুত্ব। একদিকে সংস্কৃত, উর্দু, তামিল, বাংলা, মারাঠি, পাঞ্জাবি – অন্যদিকে আধুনিক জীবনের চালিকাশক্তি হিসেবে জায়গা করে নেওয়া ইংরেজি। আমরা ইংরেজিকে বেছে নিয়েছি যোগাযোগের একটি মাধ্যম হিসেবে, আধুনিক শিক্ষার ও পেশাদার জগতে প্রবেশের সিঁড়ি হিসেবে – not as a colonial hangover, but as a pragmatic choice in a globalized world।

অমিত শাহের মন্তব্য যেন এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে এক ধরনের হুমকি লুকিয়ে আছে – একটি ভাষা ও সংস্কৃতির আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত, যেটি এক ধরণের ‘সাংস্কৃতিক একনায়কত্ব’ বলেই মনে হয়।

অমিত শাহ বহুবার হিন্দিকে “এক জাতি, এক ভাষা” নীতির কেন্দ্র করে তোলার চেষ্টা করেছেন। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, হিন্দি দিবসে তিনি বলেছিলেন, “দেশে এক ভাষা থাকা জরুরি, আর হিন্দিই হতে পারে সেই ভাষা।” এই ধরণের মন্তব্য উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা, তামিল, কন্নড়, ওড়িয়া বা অসমিয়া ভাষাভাষীদের কাছে এই বক্তব্য কেবল অসংবেদনশীল নয়, একপ্রকার সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।

ভারতের বহু মানুষ ইংরেজিতে কথা বলেন। কারণ, এই ভাষা তাঁদের জ্ঞানের জগতে প্রবেশের পথ খুলে দিয়েছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আইটি, আইন, আন্তর্জাতিক কূটনীতি – প্রতিটি ক্ষেত্রে ইংরেজি তাঁদের সুযোগ এনে দিয়েছে। আজকের ভারতের সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, লেখক, সাংবাদিক, গবেষক – যাঁরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করছেন – তাঁরা অনেকেই ইংরেজিতে দক্ষ।

তাঁদের লজ্জিত করার হুমকি আদতে একটি বর্ণবিভাজনের রাজনীতি। “যারা হিন্দিতে কথা বলে তারা আসল ভারতীয়, আর যারা ইংরেজিতে কথা বলে তারা পশ্চিমের দালাল” – এই বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা চলছে।

ভারতের সংবিধান স্বীকৃতি দেয় ২২টি ভাষাকে। তার বাইরেও রয়েছে আরও বহু ভাষা ও উপভাষা। এই বৈচিত্র্যই ভারতের গণতান্ত্রিক শক্তির উৎস। এক ভাষার আধিপত্য চাপিয়ে দিলে তা কেবল ঐতিহ্য নয়, মানুষের মৌলিক অধিকারেও হস্তক্ষেপ হয়।

বাংলার মানুষ গর্ব করে রবীন্দ্রনাথের বাংলা নিয়ে, আবার বিশ্ব সাহিত্যে যাঁরা ইংরেজিতে লেখেন, তাঁদেরও শ্রদ্ধা করে। অমিত শাহ যদি ভাবেন বাংলা বা ভারতের কোনও ভাষা ইংরেজির থেকে কমতর, তাহলে তিনি ভারতের সাংস্কৃতিক চেতনার কাছেই দায়বদ্ধ।

আমরা হিন্দিও জানি, বাংলা নিয়ে গর্ব করি, ইংরেজিতেও কথা বলি। এই বহুভাষিকতাই আমাদের পরিচয়। যে পরিচয় একক নয়, বহুত্বের – যেখানে ইংরেজি কোন “লজ্জা” নয়, বরং একটি অধিকার।

ভারত এক – তবে সেই ভারতের আত্মা বহু ভাষায় কথা বলে। অমিত শাহের এক পাক্ষিক ভাষার রাজনীতি এই দেশের মাটিতে কখনোই টিকবে না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen