৭০% অ্যালকোহল না হোক, স্যানিটাইজারে ১৮% GST থাকলেই ভাইরাস শেষ: অনির্বাণ ভট্টাচার্য

প্রতিবাদ করতে নিজের লেখায় মিশিয়ে দিলেন নিজের সিগনেচার ‘হিউমার’।

July 17, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

অভিনয় করেন, আবার মাঝেমধ্যেই মজার ছলে ‘রাজনীতি’টাও তিনি নাকি ভালোই করে থাকেন। অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ট্যুইটারে নিজের নাম আর পদবির মাঝে ঢুকিয়েছেন ‘ড্রাকুলা’ শব্দটি। সেটা অবশ্য কাজেরই প্রয়োজনে। তবে, এবার তিনি স্যানিটাইজারের জিএসটি নিয়ে মুখ খুললেন। প্রতিবাদ করতে নিজের লেখায় মিশিয়ে দিলেন নিজের সিগনেচার ‘হিউমার’।

স্যানিটাইজারে জিএসটি-র প্রসঙ্গে এদিন ট্যুইট করেছেন অনির্বাণ। বুদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গিমায় লিখেছেন, ‘যাক বাবা,নিশ্চিন্ত হলাম। স্যানিটাইজারে 70% alcohol আছে কিনা,তা জানার তো উপায় নেই,তবে 18% GST থাকলে নিশ্চিত ভাইরাস মরবেই।’ শেষে যোগ করেছেন, ‘ট্যাক্সে মিলায় ভাইরাস, প্যান্ডেমিক বহুদূর….’ যদিও শুধু জিএসটি নয়, বরবারই সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয়ে ট্যুইটার মজার সমস্ত লেখা লেখেন অভিনেতা।

চিন-ভারত সংঘাতের প্রেক্ষিতে চিনা অ্যাপ ব্যান করার পর তিনি লিখেছিলেন, ‘৫৯টা app-এর list নিজের ফোনে মেলাতে গিয়ে দেখলাম,একটাও নেই। যদিও ফোনটা one plus, ভাঙিনি এখনো। দেখি,আর কি কি list বেরোয়।……আর গাড়িতে তো আমি বরাবর ভারতীয় তেল ভরি।’ (বানান অপরিবর্তীত)। অনির্বাণের এহেন ট্যুইটের পর শুরু হয় বিতর্ক। অনেকেই তাঁর সমালোচনা করেন। কিন্তু তিনি স্বমহিমায় থেকেছেন। দিন দুয়েকের মধ্যেই ফের লেখেন, ‘ও কি ও….গরবিনী রাধা…কদম ডালে বসে আছে…কানু সাহেবজাদা…এবার ঠিক আছে ? #ভাবাবেগম্যাটার্স!’ যদিও রাজনীতির বিষয়ের বাইরে করোনা-যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে বারবার দেখা গিয়েছে অনির্বাণকে। এবার তাঁর নিশানায় স্যানিটাইজারে জিএসটি।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে জীবনের দুই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ফেস মাস্ক এবং অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কিন্তু, সম্প্রতি গোয়ার জিএসটি অথরিটি অফ অ্যাডভান্স রুলিং এই অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়ার বিধান দিয়েছে। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে এই অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আরও সস্তা হতে পারত ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি না বসলে। কিন্তু, দেশের কর ব্যবস্থাই এমন যে, এখানে সোনা-গয়নায় দিতে হয় ৩ শতাংশ জিএসটি, অথচ মানুষের প্রাণরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি দিতে হয়!

বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় স্প্রিংফিল্ডস (ইন্ডিয়া) ডিস্টিলারস নামের এক সংস্থা গোয়ায় জিএসটি অথরিটি অফ অ্যাডভান্স রুলিং-এর (এএআর) দ্বারস্থ হলে। স্যানিটাইজারের শ্রেণিবিন্যাস এবং জিএসটি হার নিয়ে আপত্তি তোলে সংস্থাটি। এর উপর থেকে জিএসটি তোলা যায় কি না সেই প্রশ্নও তোলে স্প্রিংফিল্ডস। কিন্তু, স্প্রিংফিল্ডসের আর্জি নস্যাৎ করে দিয়ে গোয়া এএআর জিএসটি হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

প্রশ্ন হল, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য না অলংকার, কিসে বেশি কর বসানো উচিত? এই সহজ সত্যটা উপলব্ধি করার মতো ভাবনা ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের নেই নাকি করোনা পরিস্থিতিতে কোষাগার ভর্তি করার একটা সহজ রাস্তা সামনে এসে গিয়েছে এর হাত ধরে?

কোভিড-১৯ পরবর্তী অধ্যায়ে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার তৈরিতে ‘আত্মনির্ভর’ হয়ে উঠেছে ভারত। প্রাথমিক মন্দা কাটিয়ে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার মজুত দেশের ভাঁড়ারে। সেই কারণে ইতিমধ্যেই অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তকমা ছেঁটে ফেলা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উপর থেকে। তা হলে কী বিতর্কের অবসান ঘটাতেই তকমা ছেঁটে ফেলা হল? প্রশ্ন উঠছে অনেক।

স্প্রিংফিল্ডস তাদের আবেদনে জানায় স্যানিটাইজার যেহেতু ঔষধি জাতীয় পণ্যের মধ্যে পড়ে তাই এর উপর ১২ শতাংশ হারে জিএসটি নেওয়া দরকার। এর উত্তরে গোয়া এএআর জানিয়ে দেয়, ‘অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার হার্মোনাইজড সিস্টেম অফ নমেনক্লেচার বা শ্রেণিবিন্যাস ব্যবস্থার ৩৮০৮ নম্বর হেডিং-এর আওতায় পড়ে, যে ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ জিএসটি হার প্রযোজ্য।’

এই প্রসঙ্গে কলকাতার জিয়ান ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্ণধার আব্দুস সাদেক সরকার বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি হিসাবে আমাদের তৈরি অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উপর ১২% জিএসটি নেওয়া হোক। বিভিন্ন কসমেটিক্স প্রস্তুতকারী সংস্থা অনেক অ্যালকোহল যুক্ত পণ্য তৈরি করে। তারা ইদানিং হ্যান্ড স্যানিটাইজারও তৈরি করছে। আমাদের সঙ্গে কসমেটিক্স সংস্থাগুলির পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু, কেউ কর্ণপাত করেনি।’ এই সুযোগে সরকার হাজার কোটি টাকা কোষাগারে ঢুকিয়ে নিয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen