‘গায়ের জোরে অধিকার হরণের চেষ্টা’, বঙ্গে SIR নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার মমতা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:৫২: আগামী ২ নভেম্বর থেকেই বঙ্গে শুরু হতে পারে SIR (Special Intensive Revision)। কোলাঘাটে পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রাম জেলার BLO ও ERO-AERO-দের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নবান্নে বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কমিশনের ভূমিকা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁর অভিযোগ, “বৈঠকের নামে বিএলওদের ডেকে হুমকি দিচ্ছে কমিশন। তাই রাজ্যকে বাদ দিয়ে কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে বৈঠক করা হচ্ছে।”
তিনি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলে বলেন, “বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়! রাজ্যের সিইওর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে, সময় হলে বলব, তিনি নিজে নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত।”
মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “এখনও তো ভোট ঘোষণা হয়নি, তাহলে কীসের ভিত্তিতে এভাবে জেলায় জেলায় বৈঠক করছে কমিশন?” খানিক থেমে নিজেই জবাব দেন, “এসআইআরের নাম করে এনআরসি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে!”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এসআইআরের (SIR) নামে ভোট কাটার চক্রান্ত চলছে। অসম সরকারের তরফে বাংলার নাগরিকদের নোটিস পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এদিন নবান্নে বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ”তাড়াহুড়োয় কাজ করতে গিয়ে যদি কোনও সম্প্রদায়ের কোনও নাগরিকের নাম বাতিল হয়, তাহলে বলব, আগুন নিয়ে খেলবেন না। এখন বাংলায় দুর্যোগ পরিস্থিতি। বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি, কাগজপত্র সব ভেসে গিয়েছে। কোথা থেকে মানুষ এখন কাগজ দেবে? কেউ কেউ আবার উৎসবের ছুটিতে বাইরে আছেন। তাঁরাই বা এখন কাগজ দেখাবেন কীভাবে?”
কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “গায়ের জোরে ভোটার অধিকার হরণের চেষ্টা। ভোটের নামে SIR, পিছনে মীরজাফর স্যার? NRC? গায়ের জোরে বাংলা দখল করবেন? পারবেন না। আপনারা বাংলাকে বঞ্চিত করেছেন, লাঞ্ছিত করেছেন। মনে রাখবেন, বাংলায় প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষ লড়াকু। তাঁরা লড়াই করে ঠিক নিজেদের অধিকার বুঝে নেবে। আপনারা তাঁদের দমিয়ে রাখতে পারবেন না।”
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন ”এসআইআরের নামে কেন এনআরসি নোটিস পাঠাল? কোন অধিকারে বাংলার মানুষকে অসম সরকার এই নোটিস পাঠাচ্ছে? সামনে এসআইআর আর পিছনে কী? এনআরসি করবেন গায়ের জোরে? পারবেন না কোনওদিন। এসআইআরের নামে ভোট কাটার ষড়যন্ত্র। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে গৈরিকীকরণের চেষ্টা চলছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এসআইআর শুরুর আগে বিজেপির একজন মন্ত্রী কী করে বলে, দেড় কোটি নাম বাদ দেওয়া হবে। কমিশনের কাছে আমরা নিরপেক্ষতা আশা করি। সরকার, বিরোধী মিলেই গণতন্ত্র। সংবিধানে সাধারণ মানুষের অধিকার রয়েছে, সেটা খর্ব করা বরদাস্ত করব না। এসআইআরের নামে তাড়াহুড়ো করে কারও নাম কাটা হলে, সে রাজবংশী হোক, মতুয়া হোক, একজন ভোটারের নাম বাদ গেলে পাল্টা অ্যাকশন হবে।”
জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এসআইআর (Special Intensive Revision) শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের জন্য জেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার কমিশন বৈঠকের সময় স্থানীয় ব্রাহ্মণ সমিতি এসআইআর বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়।
উল্লেখ্য, বিহারে এসআইআর নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে, যেখানে আধারকে প্রামাণ্য নথি হিসেবে গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বাংলায় এসআইআর কবে হবে তা ঘোষণা করা হলেও, প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। তৃণমূল কংগ্রেস হুঁশিয়ারি দিয়েছে একজন বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলেও আন্দোলন হবে।