১৫ আগস্ট, মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা! দেশের একাধিক পুরসভার নির্দেশিকা ঘিরে বিতর্ক
স্বাধীনতা দিবসে কসাইখানা ও মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে হবে। এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই দেখছেন খাদ্যাভ্যাসে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হিসেবে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:২১: স্বাধীনতা দিবসে মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে একাধিক পুরসভা। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিরোধীদের অভিযোগ, স্বাধীনতার দিনে মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।
হায়দ্রাবাদ, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন শহরে নির্দেশ জারি হয়েছে। গ্রেটার হায়দ্রাবাদ পুরসভা জানিয়েছে, ১৫ ও ১৬ আগস্ট বন্ধ থাকবে কসাইখানা ও মাংসের দোকান। কারণ, ১৬ আগস্ট জন্মাষ্টমী।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্বাধীনতা দিবসে কসাইখানা ও মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে হবে। এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই দেখছেন খাদ্যাভ্যাসে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হিসেবে। প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি ঠিক করে দিতে পারে কে কী খাবেন?
বিরোধী নেতারা বলছেন, স্বাধীনতা মানে শুধু পতাকা উত্তোলন নয়, নিজের পছন্দমতো জীবনযাপন করার অধিকারও। এই নিষেধাজ্ঞা সেই অধিকারকে খর্ব করছে। এই বিতর্কে নতুন করে আলোচনায় এসেছে নাগরিক স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার।
হায়দ্রাবাদের সাংসদ ও AIMIM প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি স্বাধীনতা দিবসে মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। বুধবার তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “দেশের বিভিন্ন পুরসভা ১৫ আগস্ট মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।হায়দ্রাবাদেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।”
ওয়েইসির বক্তব্য, “স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের কোনও সম্পর্ক নেই। তেলঙ্গানার অধিকাংশ মানুষ মাংস খান। এই নিষেধাজ্ঞা নাগরিক স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অধিকারকে বাধা দেয়।”
তিনি স্পষ্ট করেছেন, “এটি শুধু প্রশাসনিক নির্দেশ নয়, এটি ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।”
মহারাষ্ট্রের কল্পনা-ডোম্বিভালি পুরসভাও একই নির্দেশ দিয়েছে। ১৪ আগস্ট মধ্যরাত থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে কসাইখানা। পুরনিগম জানিয়েছে, আইন ভাঙলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুরনিগমের দাবি, এই নিয়ম বহু বছর ধরে চলে আসছে। জনশৃঙ্খলা ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ। তবে বিরোধীরা একমত নয়।
এনসিপি (NCP) নেতা জিতেন্দ্র অওহড় ঘোষণা করেছেন, তিনি ‘মটন পার্টি’ করবেন ১৫ আগস্ট। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার দিনে খাওয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া যায় না।”
শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা আদিত্য ঠাকরে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের ধর্মে উৎসবেও মাছ-চিংড়ি প্রসাদে থাকে। এটা ঐতিহ্য।” তিনি কমিশনারের বরখাস্তের দাবি তুলেছেন।
অন্যদিকে শাসকদলের নেতা বিষ্ণুনাথ ভইর বলেন, “একদিন মাংস না খেলেই বা কী হবে?” তাঁর মতে, পুরনিগম নাগরিকদের স্বার্থেই কাজ করছে।
উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারও এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকেন শহরে। এভাবে নিয়ম চাপানো ঠিক নয়।”