আয়ুর্বেদেই মিলেছে ১০০% সাফল্য, কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশা জোগাচ্ছে AIIA

সব কোভিড পজিটিভ রোগী বাড়ি ফিরেছেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে। মৃত্যুর হার শূন্য!

August 1, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

কোনও অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল লাগেনি। স্টেরয়েডও নয়। স্রেফ আয়ুর্বেদ ওষুধের জোরেই একশো শতাংশ করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা গিয়েছে। সব কোভিড পজিটিভ রোগী বাড়ি ফিরেছেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে। মৃত্যুর হার শূন্য!

বিশ্বাস করা কঠিন হলেও বাস্তব। বিরল এই নজির গড়ে কোভিড গবেষণায় নয়া দিগন্ত খুলে দিয়েছে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ (AIIA)। যার ‘১০০ শতাংশ সুস্থতা’র সাফল্যকে কুর্নিশ জানাচ্ছে ভারত সরকারের আয়ুশ মন্ত্রক (Ayush Ministry)। বস্তুত আয়ুশমন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক নিজের মুখেই ইনস্টিটিউটের এহেন যুদ্ধজয়ের খবর জানিয়েছেন।

তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানটি থেকে এ পর্যন্ত চল্লিশের বেশি কোভিড (COVID-19) রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সবাই যে মৃদু উপসর্গযুক্ত ছিলেন, তা নয়। ‘মডারেট’ উপসর্গযুক্ত ও সংকটাপন্ন রোগীও ছিলেন। কিন্তু একজনও মারা যাননি। এআইআইএ-র অধিকর্তা ডা. তনুজা নেসারির কথায়, “সংকটজনক রোগীদের অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া হয়েছে। ছ’বেডের আইসিইউ খোলা হয়েছে। সেখানে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও অ্যালোপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়নি। হাইড্রক্সিক্লরোকুইন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ফ্ল্যাভিপিরাভির, রেমেডিসিভিরের মতো কোনও অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিবায়োটিকও নয়। দেওয়া হয়নি কোনও স্টেরয়েডও। পুরো চিকিৎসা হয়েছে আয়ুর্বেদ মতে।”

আয়ুর্বেদিক ওষুধেই যে কাজ হয়েছে, তার প্রমাণ কী? অধিকর্তার দাবি, প্রতিটি রোগীর এক্স-রে, আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাস, ইসিজি-সহ একাধিক টেস্ট হয়েছে। রেডিওলজিক্যাল এবং বায়োকেমিক্যাল মার্কারই বলে দিচ্ছে, আয়ুর্বেদিক ওষুধ কাজ করেছে। ইমিউনিটি মার্কার, ইনফ্লামেটরি মার্কার, কোয়াগুলেটরি প্রোফাইলের উন্নতি হয়েছে। কলকাতার ‘সেন্ট্রাল আয়ুর্বেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ড্রাগ ডেভেলপমেন্টে’র রিসার্চ অফিসার ডা. অচিন্ত্য মিত্র জানিয়েছেন, কোভিড রোগীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হাইপক্সিয়া। অর্থাৎ রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যাওয়া। এবং থ্রম্বোসিস। মানে, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া।

আয়ুর্বেদে এমন কিছু ‘অ্যান্টিকোয়াগুলেটরি’ ওষুধ আছে, যা থ্রম্বোসিস ঠেকাতে সক্ষম। আর হাইপক্সিয়া মোকাবিলায় অক্সিজেন থেরাপি তো আছেই। দিল্লির এই সরকারি আয়ুর্বেদ হাসপাতালে অবশ্য মডার্ন মেডিসিনের ডাক্তারবাবুরাও আছেন। কারও জ্বর মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে ওঁদের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে দিল্লি এইমসের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে টেলিমিডিসনের ব্যবস্থা হয়েছে। এমনকী, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে রোগীকে এইমসে রেফার করার ব্যবস্থাও রয়েছে। “সেই অর্থে বলা যেতে পারে, আমরা এখানে ইন্টিগ্রেটেড থেরাপি দিচ্ছি।” মন্তব্য অধিকর্তার। তিনি জানান, এখানে আয়ুশ চিকিৎসকরাই প্রশিক্ষণ নিয়ে অক্সিজেন থেরাপি দিচ্ছেন। সব কিছু হচ্ছে আইসিএমআর প্রোটোকল মেনে। রোগীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে কাউন্সেলিং, রিক্রিয়েশন থেরাপিও দেওয়া হচ্ছে। খাস রাজধানীর বুকে ৫০ বেডের এই কেন্দ্রীয় সরকারি আয়ুর্বেদ হাসপাতালে প্রথমে তেমন রোগী আসছিলেন না। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছিল। কিন্তু এখন বেশিরভাগ আসনই ভরা থাকছে। ডা. নাসেরি জানালেন, এআইআইএ-র ওপিডিতে কোভিড টেস্ট হচ্ছে। সেখান থেকেই মূলত ‘পজিটিভ’ রোগী ভরতি হচ্ছে।

তবে এখানকার চিকিৎসা পদ্ধতির সবচেয়ে বড় ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর’ দিল্লি পুলিশ। এমনটাই জানালেন এখানকার ডাক্তারবাবুরা। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, প্রায় ৮০ হাজার পুলিশকর্মী এআইআইএ-র দেওয়া প্রোফাইল্যাক্সিস ওষুধ খেয়েছেন। ত্রিশটি বেড পুলিশের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হয়েছে। জুন থেকে এখানে কোভিড চিকিৎসা শুরু হয়েছে। একবারের জন্যও মডার্ন মেডিসিনের চিকিৎসকরা সমালোচনা করেননি। বরং সহযোগিতা করছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন। অধিকর্তার বক্তব্য, “আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতা জানি। জানি, ক্রিটিক্যাল কেয়ারে মডার্ন মেডিসিন অনেক বেশি কার্যকর। তাই এইমসের পরামর্শ নিয়ে এখানে ক্রিটিক্যাল কেয়ার দেওয়া হচ্ছে।” শুধু এআইআইএ নয়, দিল্লিতে সব আয়ুর্বেদ হাসপাতালেই এখন কোভিড চিকিৎসা চালু। চলছে একাধিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। ছ’মাসের মধ্যে তার পর্ব শেষ হওয়ার কথা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen