মন্ত্রিত্ব খুইয়েই অবসরের ভাবনা বাবুলের, ফেসবুক পোস্টে জল্পনা
বাবুলের রাজনীতিতে আগমন এবং উত্থান যেমন নাটকীয়, তেমনই নাটকীয় হতে পারে তাঁর ইচ্ছা-নিষ্ক্রমণ।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার পর কি রাজনীতিই ছেড়ে দিচ্ছেন বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)? টানা সাত বছর সক্রিয় রাজনীতিতে (এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বে) থাকার পর কি রাজনীতি থেকে পুরোপুরিই বিদায় নিতে চলেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী? গত কয়েকদিনে তাঁর ব্যবহারিক গতিপ্রকৃতি দেখে তেমনই মনে হচ্ছে। একের পর এক ফেসবুক পোস্টে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ তো বটেই, নিজের ‘টুইটার বায়ো’-তে যে ভাবে সামগ্রিক ভাবেই রাজনীতি থেকে নিজের দূরত্ব রচনা করেছেন বাবুল, তাতে তাঁর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ইঙ্গিত ক্রমশ জোরালো জল্পনায় পরিণত হচ্ছে। পাশাপাশিই স্পষ্ট হচ্ছে রাজনীতি (Politics) সম্পর্কে তাঁর বীতশ্রদ্ধা।
বাবুলের রাজনীতিতে আগমন এবং উত্থান যেমন নাটকীয়, তেমনই নাটকীয় হতে পারে তাঁর ইচ্ছা-নিষ্ক্রমণ। রাজনীতি ছেড়ে দিলে আসানসোলের সাংসদকে তাঁর সাংসদের পদও ছেড়ে দিতে হবে। বাবুলের পরিচিত এবং হিতৈষীরা মনে করছেন, তেমন হলে সাংসদের পদ ছেড়ে দিতেও দ্বিধা করবেন না তিনি। ঘটনাচক্রে, বাবুলের সঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সম্পর্কের টানাপড়েন দলের গণ্ডি ছেড়ে গত কয়েকদিনে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার পর বাবুল যে ফেসবুকপোস্ট করেছিলেন, তা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন দিলীপ। বাবুল আবার ফেসবুকেই তার শ্লেষপূর্ণ জবাব দিয়েছেন।
বাবুলের সঙ্গে বাদানুবাদের ফলে দিলীপ দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির তরফে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে শো-কজ করাতে পারেন বলেও আশঙ্কা করছে বাবুল শিবির। তাদের ধারণা, সেই অনুমান থেকে বাবুল তার আগে রাজনীতিই ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারেন। তিনি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিচ্ছেন কি না জানতে চাওয়ার জন্য আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাবুল সাড়া দেননি। অগত্যা তাঁর এক হিতৈষীকে দিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ওই প্রশ্ন করানো হয়েছিল। সেই হিতৈষীর দাবি, তার জবাবে বাবুল বলেছেন, তিনি ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না। তবে আপাতত তিনি কয়েকদিন রাজনীতি থেকে ছুটি নিচ্ছেন।
যা থেকে ওই শুভাকাঙ্ক্ষীর ব্যাখ্যা, রাজনীতি ছাড়ার প্রশ্নে বাবুল যেমন ‘হ্যাঁ’ বলেননি, তেমনই সরাসরি ‘না’-ও বলেননি।
ঘটনাচক্রে, বাবুলের মনোভাব জেনে ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের একটি সেতু স্থাপন করেছেন তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার অব্যবহিত পরেই বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের একটি সেতু স্থাপন করেছেন মমতা। যা থেকে তৃণমূলে এমন জল্পনাও ছড়িয়েছে যে, মমতা-বাবুল দূরত্ব কি ক্রমশ কমছে? যার পরিণতিতে ভবিষ্যতে বাবুলের পদ্মফুল থেকে জোড়াফুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন রাজ্যে শাসকশিবিরের একাংশ।
ঘটনাচক্রে, মোদী মন্ত্রিসভার শেষ রদবদলে বাবুলকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর পর মমতা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘‘ওরা (বাবুলের সঙ্গেই বাদ পড়েছেন অপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী) আবার কী দোষ করল!’’ যা শুনে ঘনিষ্ঠদের কাছে সন্তোষ গোপন করেননি বাবুল। যেমন তিনি প্রীত হয়েছেন একদা আসানসোলে তাঁর ‘শত্রু’ অধুনা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির শংসা পেয়েও। জিতেন্দ্র বলেছেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয় মন্ত্রী থেকেও কাজ করেছেন। মন্ত্রী না থাকলেও করবেন।’’