ভোটের স্বার্থে বঙ্কিম-আবেগ ব্যবহার? ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে কেন্দ্রের ভুল তথ্যে ক্ষুব্ধ বঙ্কিম গবেষকরা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২২.০০: ‘বন্দে মাতরম’ গানের ১৫০ বছর উদযাপন নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরেই দানা বেধেছে বিতর্ক। একদিকে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে (Bankim Chandra Chattopadhyay) ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধন, অন্যদিকে গানের রচনাকাল নিয়ে তথ্যের গরমিল-এই দুই ইস্যুতে এবার গর্জে উঠলেন সাহিত্যসম্রাটের জন্মস্থান নৈহাটির গবেষকরা। তাঁদের অভিযোগ, ঋষি বঙ্কিমকে শ্রদ্ধা জানানো নয়, বরং নির্বাচনের আগে রাজনীতি করার উদ্দেশ্যেই ভুল তথ্য পরিবেশন করছে কেন্দ্র।
শনিবার নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায়, যেখানে ১৮৩৮ সালে বঙ্কিমচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কালজয়ী ‘বন্দে মাতরম’ রচনা করেছিলেন, সেই বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে একটি গণ কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। সেখানেই লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য ও ভুল তথ্য পরিবেশন নিয়ে সোচ্চার হন উপস্থিত বিদ্বজ্জনেরা।
গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ রতন কুমার নন্দী এদিনের সভায় দাবি করেন, কেন্দ্রের তথ্য ভুল। তিনি বলেন, “১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ‘বন্দে মাতরম’ লেখা হয়েছে-এর কোনও ঐতিহাসিক সূত্র আমরা গবেষণার কোথাও পাইনি। আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে ১৮৭৪ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে এই গান লেখা হয়েছিল। তাই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা কীভাবে ওই দিনটিকে নির্ধারিত করলেন, তা আমরা জানতে চাই।” গবেষকদের দাবি, ইতিমধ্যেই ১৫০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে এবং বর্তমানে ১৫১তম বছর চলছে। নিচুতলার কোনো প্রস্তুতি বা সঠিক গবেষণা ছাড়া এভাবে উদযাপনকে ‘অসৎ উদ্দেশ্য’ হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।
শুধুমাত্র সাল-তারিখ নয়, সংসদে দাঁড়িয়ে সাহিত্যসম্রাটকে ‘বঙ্কিমদা’ বলা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন গবেষকরা। রতনবাবু বলেন, “বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বঙ্কিমদা বলাটা অপমানজনক। সাংসদ সৌগত রায় এই ভুল ধরিয়ে দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যেভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন, সেটা আরও আপত্তিকর। স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজমন্ত্রের স্রষ্টাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সঠিক তথ্য জানবেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
আলোচনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের প্রসঙ্গও উঠে আসে। সংসদে তিনি ‘বন্দে মাতরম’ (Vande Mataram) বলতে গিয়ে ‘বন্দে ভারত’ বলে ফেলেছিলেন। এই প্রসঙ্গে পার্থ ভৌমিক কটাক্ষ করে বলেন, “বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা নেই, তারাই মনীষীদের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করছে। এর জবাব বাংলার মানুষ দেবে।”
সব মিলিয়ে, বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মভিটে কাঁঠালপাড়ার বঙ্কিম ভবন চত্বর এখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে। গবেষক থেকে সাধারণ মানুষ-সকলের একটাই দাবি, রাজনীতির ঊর্ধ্বে রেখে সাহিত্যসম্রাটকে যথাযোগ্য সম্মান ও সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হোক।