নেপালে রণক্ষেত্র, পোখারায় ভারতীয় পর্যটক উপাসনা গিলের সাহায্যের আর্তনাদ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১৮:১৯: নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে। এই অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যে পোখারায় প্রাণে বাঁচার লড়াই করছেন ভারতীয় নাগরিক উপাসনা গিল। তিনি সেখানে একটি ভলিবল লিগের আয়োজনের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বিক্ষোভ শুরু হলে তাঁর জীবন চরম বিপদের মুখে পড়ে।
উপাসনা গিল একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানান। ভিডিওতে তিনি বলেন,
“আমার নাম উপাসনা গিল। আমি পোখারায় আটকে পড়েছি। ভারতীয় দূতাবাসের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের সাহায্য করুন। যাঁরা এই বার্তাটি দেখতে পাচ্ছেন, সবাই এটি ছড়িয়ে দিন, যাতে এটি দূতাবাসের কাছে পৌঁছায়।”
তিনি আরও জানান,”আমি এখানে ভলিবল লিগ পরিচালনা করতে এসেছিলাম। যে হোটেলে ছিলাম সেটি বিক্ষোভকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার সমস্ত জিনিসপত্র সেখানে ছিল, কিছুই বাঁচাতে পারিনি। আমি তখন স্পাতে ছিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, কয়েকজন লোক বিশাল লাঠি নিয়ে আমাকে তাড়া করছে। প্রাণ বাঁচাতে আমি কোনোরকমে পালিয়ে আসি।”
পোখারায় বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে এখন স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরাও নিরাপত্তাহীন। উপাসনা জানান, “রাস্তায় আগুন জ্বালানো হচ্ছে, চারদিকে বিশৃঙ্খলা। তারা কাউকে রেহাই দিচ্ছে না, সে পর্যটক হোক বা কাজের সূত্রে এখানে আসা কেউ হোক।”
প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ নেয়। পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে শেষ পর্যন্ত নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাওডেলকে পাঠানো চিঠিতে তিনি লিখেছেন,
“বর্তমান সংকট নিরসনের জন্য এবং সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে রাজনৈতিক সমাধান বের করতে আমি আজ পদত্যাগ করছি।”
বর্তমানে নেপাল আর্মি কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলাচলে বিধিনিষেধ এবং সন্ধে ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি রয়েছে। কারফিউ চলাকালে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বা হামলাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
উপাসনা গিল শেষবারের মতো আবেদন জানিয়ে বলেন, “আমরা জানি না আর কতক্ষণ এভাবে লুকিয়ে থাকতে হবে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা কয়েকজন এখানে আটকে আছি। সবাই মিলে অনুরোধ করছি, আমাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান।”