বেহালার শারোদৎসবে নান্দনিকতার সঙ্গে ইতিহাসের মেলবন্ধন

তারাতলা ছাড়িয়ে আরও দক্ষিণে গেলে পাবেন ইতিহাসের গন্ধমাখা পুজো

October 12, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নান্দনিকতার সঙ্গে ইতিহাসের মেলবন্ধন। শারদীয়ার বেহালা এই প্রেক্ষিতেই অনন্য। এমনিতেই ভৌগোলিক পরিধি বিশাল। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মণিমুক্তোর বিচারে পুজোর ক্যানভাসও গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ বাড়ছে। চোখ রাঙাক বর্ষা, বাজেটে টান পড়ুক, বিধিনিষেধ থাক জমায়েতে, তবু তার মধ্যেই পুজোয় অভিনব সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতেছে বেহালা।  

কী নেই এখানে? তারাতলা ছাড়িয়ে আরও দক্ষিণে গেলে পাবেন ইতিহাসের গন্ধমাখা পুজো। মিলবে আধুনিকতার থিমে নজরকাড়া মণ্ডপও। আবার তিনশো কোটি টাকার পুজোও দেখবেন। বনেদিয়ানা, পারিবারিক ঐতিহ্যে ভরপুর পুজোও হাতের সামনে। হাজির তারকার ঝলমলানিও। মানবিকতার ছোঁয়াও থাকছে পুরোদস্তুর। যাতে কঠিন এই সময়ে চারপাশের নেতিবাচক ভাবনার মধ্যেই আলোর তরঙ্গ স্পর্শ করে প্রাণে।

এর মধ্যে বড় আকর্ষণ অবশ্যই সাবর্ণপাড়া বড়িশা সার্বজনীন দুর্গোৎসব। যেখানে সময় থমকে রয়েছে ১৬০৫ খ্রীষ্টাব্দে। রাজশাহীর রাজা কংসনারায়ণের নির্দেশে প্রশান্ত চিত্রকর আঁকেন দুর্গা প্রতিমার ছবি। যা হয়ে ওঠে সময়ের চেয়ে আধুনিক। এরপর পাঁচ মৃৎশিল্পীকে বলা হয় প্রতিমা গড়তে। শেষ পর্যন্ত পুজোর জন্য বেছে নেওয়া হয় রমেশ ভাস্করের গড়া প্রতিমা। উৎসবপ্রাঙ্গণ সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব পান সনাতন পণ্ডিত। সেই সময় উৎসব খাতে রাজা খরচ করেন ৯ লক্ষ টাকা। গবেষণা করে জানা গিয়েছে, সেই টাকার বর্তমান মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ঐতিহাসিক আবহে থাকছে আধুনিকতার ছোঁয়াও। গগনেন্দ্র ঠাকুরের মডার্ন আর্ট জীবন্ত হয়ে উঠেছে মণ্ডপে।

বড়িশা ক্লাব সময়ের সরণি বেয়ে পিছিয়ে গিয়েছে আরও দূরে, বল্লাল সেনের রাজত্বে। স্বপ্নাদেশে পাওয়া দূর্গার মূর্তি ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। যা পরিচিত ঢাকেশ্বরী নামে। স্বাধীনতার পর সেটাই কলকাতার কুমারটুলি অঞ্চলে চলে আসে। নতুনভাবে শুরু হয় পুজো। উদ্বাস্তু সমস্যার আঙ্গিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেই ইতিহাস। থাকছে প্রশ্ন, আবার ভিটেমাটি-শিকড় হারিয়ে ফেলে অসহায় হয়ে পড়বে না তো মানুষ!   

গত দু’বছর ধরেই করোনা, কোভিড, লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনের মতো শব্দ হয়ে উঠেছে বঙ্গজীবনের অঙ্গ। সব প্রতিকূলতা, যাবতীয় বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তাই বেঁচে থাকাকেই ‘উদযাপন’ করতে চেয়েছে বেহালা ২৯ পল্লী। স্বল্প বাজেটের মধ্যেও প্রিয়জন হারানোর বিষাদ, যন্ত্রণা ভুলে উৎসবে মেতে উঠতে চাওয়ার আবেগই প্রাধান্য পাচ্ছে থিমে। সেই সুরের রেশ ধরে বেহালা আদর্শ পল্লী পরিণত হয়েছে ধানের গোলায়। দেবী এখানে অন্নপূর্ণা। থিমের নাম আনন্দধারা। আবার স্বাভাবিক হোক জীবন, নব আনন্দে রসসিক্ত হোক প্রতিদিনের চলা, এটাই প্রার্থনা। বেহালা এসবি পার্কের পুজো আবার আড়ম্বর কমিয়ে হয়ে উঠেছে মানবমুখী। ‘মায়ের হেঁশেল’-এ পাঁচদিনই মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা থাকছে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য।

সাবেকিয়ানায় মাখা পারিবারিক পুজোর আস্বাদ পেতে এলে সেরা ঠিকানা বড়িশায় সাবর্ণ রায়চৌধুরি পরিবারের বাড়ি। কোভিড সুরক্ষাবিধি মেনে এবারও আটচালা বাড়ি, বড় বাড়ি, মেজ বাড়ি, মাঝের বাড়ি, কালীকিঙ্কর ভবন আর বেনাকি বাড়িতে পুজো হবে। তবে ঠাকুরের উচ্চতা কমছে কালীকিঙ্কর ভবনে। আর বড় বাড়িতে গতবারের মতো এবারও হচ্ছে না কুমারী পুজো। 

বেহালা চৌরাস্তার প্লেয়ার্স কর্নারের পুজোর আবার অন্য আকর্ষণ। রথ দেখা কলা বেচার মতো এখানে প্রতিমা দর্শনের সঙ্গে উপরি পাওনা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঢাক বাজানো। চোখের সামনে দাদাকে দেখার সুযোগ কেউ ছাড়তে চায় নাকি!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen