করোনা আবহেও বাংলার ঋণ যথেষ্ট কম
ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় কাছাকাছি রয়েছে কর্ণাটক, কেরল, গুজরাত বা হরিয়ানার মতো রাজ্য।

লকডাউনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। তারপর আনলক পর্ব শুরু হলেও পুরনো ছন্দে ফেরেনি অর্থনৈতিক কাজকর্ম। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের আয় কমেছে। ফলে রাজ্য চালাতে গেলে বাজার থেকে ধার নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, করোনা সংক্রমণের পর থেকে এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে টাকা ধার করেছে, তা অনেক রাজ্যের তুলনায় যথেষ্টই কম। এমনকী, গত বছরের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচার করলে দেখা যাচ্ছে, খোলা বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কিছু রাজ্যে যথেষ্ট বেশি। সেই তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ অনেকটাই পিছিয়ে। এখানে জোর দেওয়া হয়েছে বিকল্প উপায়ে আয় বাড়ানোর উপর।
এপ্রিল মাসের গোড়ার দিক থেকে বাজার থেকে ধার নিতে শুরু করে রাজ্যগুলি। এই ক’মাসে কোন রাজ্য কত টাকা ধার নিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার একটি তুল্যমূল্য হিসেব সামনে এনেছে দেশের প্রথম সারির একটি ক্রেডিট রেটিং সংস্থা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত ৭ এপ্রিল থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বাজার থেকে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ১১ আগস্ট দু’হাজার কোটি টাকা ধার করেছে সরকার। ১৫ বছরের মেয়াদে ওই ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঠিক ওই সময়ের নিরিখে ঋণের অঙ্কে বাংলার থেকে অনেক এগিয়ে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু বা রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলি। যেমন, মহারাষ্ট্রের ঋণের পরিমাণ ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, তামিলনাড়ুর ৩৯ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান এবং তেলেঙ্গানার ক্ষেত্রে অঙ্কটা যথাক্রমে ২৪ হাজার, ২২ হাজার ২৫০ এবং ১৬ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় কাছাকাছি রয়েছে কর্ণাটক, কেরল, গুজরাত বা হরিয়ানার মতো রাজ্য।
গত বছরের তুলনায় কে বেশি ধার নিল? সেই হিসেবের জন্য গত বছরের ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে বেছে নিয়েছে ক্রেডিট রেটিং সংস্থা। আরবিআইয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওই চার মাসে বাজার থেকে ধার করেছিল ৯ হাজার ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ঋণের হার ৭২ শতাংশ বেশি। সেই হিসেবে এবার তামিলনাড়ুতে তা বেড়েছে ১২৬ শতাংশ, সিকিমে ১১৯ শতাংশ, নাগাল্যান্ডে ২৫০ শতাংশ, মহারাষ্ট্রে ১৭৬ শতাংশ এবং কর্ণাটকে ৪০০ শতাংশ। অন্ধ্রপ্রদেশে এই হার বাংলার প্রায় সমান। তবে বিহার, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ বা পাঞ্জাবের মতো কয়েকটি রাজ্যের ঋণ নেওয়ার অঙ্ক বাংলার তুলনায় কম, বলছে ক্রেডিট রেটিং সংস্থার তথ্য।
লকডাউনে প্রতিটি রাজ্যেই যেমন আয় বা রাজস্ব কমেছে, তেমনই করোনার কারণে স্বাস্থ্যখাতে খরচ বেড়েছে অনেকটাই। পশ্চিমবঙ্গে এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে সবার জন্য রেশন এবং উম-পুনে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখভালের দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলি যাতে বেশি ঋণ নিতে পারে, তার সুযোগ বাড়িয়েছে কেন্দ্র। আগে যেখানে রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অর্থাৎ জিডিপির তিন শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যেত, এখন তা পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগ নিতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা শর্ত মেনে চলতে হবে রাজ্যগুলিকে। তা নিয়ে নতুন করে রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাতের রাস্তা তৈরি হয়েছে। এরপরও পশ্চিমবঙ্গ সরকার অন্যদের তুলনায় যেভাবে ঋণের বোঝা এড়িয়েছে, তা প্রশংসনীয়, বলছেন প্রশাসনের কর্তারা।